গাইবান্ধা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৩ ২০:৩৭ পিএম
প্রবা ফটো
ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা, করতোয়া, কাটাখালী, ঘাঘট নদ-নদীবেষ্টিত গাইবান্ধার চরাঞ্চলগুলোয় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। চরের মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় ভাগ্যের চাকা ঘুরছে স্থানীয় চাষিদের। বর্তমানে ক্ষেত থেকে ভুট্টা তুলে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি ভুট্টাগাছ। প্রায় একই উচ্চতায় থাকা গাছগুলো হৃষ্টপুষ্ট ফসলের ভারে অনেকটা এদিক-সেদিক হেলে পড়ছে। পরিপক্ব ভুট্টার মোচায় অনেকটা হালকা বাদামি রঙ লেগেছে। কোনোটার মোচা আবার গাঢ় সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকায় তা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে না। এদিকে আগাছা সরিয়ে ফসল সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
যেসব চাষির নিজস্ব জমি নেই, তারাও অন্যের জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষ করে সচ্ছলভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। তাই অধিক লাভের আশায় এ অঞ্চলের চাষিদের দিন দিন ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। ২০২২ সালের চেয়ে চলতি বছর ব্যাপকহারে ভুট্টার চাষ বেড়েছে। ফলন ও বাজারে চাহিদা বেশি হওয়ায় ফসলটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ২০২৩ সালে গাইবান্ধা জেলায় ১৭ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছিল ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চরাঞ্চলের ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়। চলতি বছর চাষের পরিধি বেড়ে শুধু চরাঞ্চলেই আবাদ হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এ অঞ্চলে ভুট্টার আবাদ দিন দিন বাড়ছে।
গাইবান্ধার চরগুলোর বেলে মাটিতে এবার ভুট্টার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। চাষিরা ভুট্টার মোচা সংগ্রহ করে ঘরে তুলছেন। কেউ সংগ্রহ করা ভুট্টার মোচাগুলো থেকে ভুট্টা বের করছেন। অপরদিকে ভুট্টার উৎপাদনে মিলছে সরকারি সহযোগিতা আর বাজারজাতে নেই কোনো বিড়ম্বনা। পাইকাররা বাড়ি এসে মণপ্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা দরে ভুট্টা সংগ্রহ করছেন।
সদর উপজেলার কামারজানির কৃষক আইয়ুব আলী ও রিয়াজউদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, প্রত্যেকেই দুই বিঘা করে ভুট্টা চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। তাদের প্রতি বিঘায় ভুট্টা চাষ করতে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি প্রায় ৩৫ মণ ভুট্টা পেয়েছেন তারা। এতে ৩০-৩৫ হাজার টাকা বিঘাপ্রতি পাবেন বলে আশা করছেন।
ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমি চুক্তি নিয়েও ভুট্টা চাষ করেছেন তিনি। এ বছর ভুট্টার চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কৃষি ফসল হিসেবে ভুট্টা খুবই লাভজনক। চরাঞ্চলে এ ফসলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। ভুট্টা চাষে সরকারিভাবে কৃষকদের প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন।