সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ
নুপা আলম, কক্সবাজার
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৩ ১৬:৩৭ পিএম
টেকনাফের শহরপরীর দ্বীপে বিশুদ্ধ পানির জন্য ছুটছে এক শিশু। বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরপাড়া এলাকা থেকে তোলা। প্রবা ফটো
ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের পঞ্চম দিনেও সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের মানুষের উদ্বেগ কাটেনি। তাদের ঘর বিধ্বস্ত, গাছ উপড়ে যাওয়ার পর সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু খাবার ত্রাণ হিসেবে জুটলেও এখনও ঘর তৈরির কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি অন্তত দুই হাজার পরিবার। এসব পরিবারের মানুষ নানাভাবে আত্মীয়স্বজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা আশ্রয়কেন্দ্রে রাতযাপন করছেন। এর মধ্যে লবণাক্ত পানি যেন মহাচিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের অর্ধেকের বেশি নলকূপ থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব নলকূপ থেকে পানি আসছে তা লবণাক্ত। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন তারা। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও বন্ধ আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, মোখা-পরবর্তী দ্বীপের প্রধান সমস্যা হয়ে উঠেছে খাওয়ার পানি। দ্বীপের বেশিরভাগ নলকূপ নষ্ট হয়ে গেছে। যে কয়েকটি নলকূপ থেকে পানি আসছে, তা লবণাক্ত। কোনো সময় দ্বীপের পানি লবণাক্ত ছিল না। এই প্রথম। এখন নতুন করে নলকূপ স্থাপন করা জরুরি। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে নতুন করে নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ শুকনো খাবার, চাল, ডালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী ত্রাণ হিসেবে পেয়েছেন। তবে ঘর বিধ্বস্ত হওয়া পরিবারগুলো এখনও ঘর করতে পারেনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে টিনসহ ঘর তৈরির কিছু উপকরণ দ্বীপে পৌঁছানোর কথা।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ২০০ পরিবারের জন্য ৪০০ বান্ডিল টিনসহ নানান উপকরণ ট্রলারযোগে পাঠানো হচ্ছে। আজকের (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার আগেই তা পৌঁছে যাবে। পর্যায়ক্রমে সবার কাছে তা পাঠানো হবে। পানির সংকট নিরসনে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সেন্টমার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, দ্বীপে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। মোখার আঘাতে ব্যাপক সংখ্যক গাছ ভেঙে যাওয়ায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা স্বাভাবিক করে বিদ্যুৎ চালু করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে সহযোগিতা করা হবে। বিদ্যুৎ চালু হলে মোটরের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করলে পানির সমস্যা কিছুটা দূর হবে। এখন জরুরি ভিত্তিতে অন্তত পাঁচটি নলকূপ স্থাপন করা দরকার।
মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপে এখনও এক হাজার পরিবার খোলা আকাশের নিচে। এ অবস্থায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সরকারিভাবে কিছু টিন পাঠানো হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যান্যদের ঘর তৈরিতে সহায়তা প্রয়োজন।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া ছাড়া অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। দ্বীপের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা জসিম মাহমুদ জানান, শাহপরীর দ্বীপের নলকূপের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। খাওয়ার পানির জন্য অনেক দূরে যেতে হচ্ছে। দ্বীপে কিছু ত্রাণ পৌঁছলেও ঘর তৈরির জন্য সহায়তা পৌঁছেনি। বিশেষ করে জালিয়াপাড়ার একটি এলাকায় ৩০০ পরিবারসহ ১ হাজার পরিবার এখনও খোলা আকাশের নিচে।
সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোছাইন জানিয়েছেন, শাহপরীর দ্বীপের পানি সমস্যা জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা প্রয়োজন। এর জন্য বেশ কিছু নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে ঘর তৈরিতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মঞ্জুর জানান, সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় স্বাভাবিকভাবে অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। একটু নিচেই পানির স্তর পাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। মোখার জোয়ারে লবণাক্ত পানি ওই স্তরের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে তা এখনও লবণাক্ত আছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে এটা কয়েকদিন স্বাভাবিক থাকলে পানি আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। একই সঙ্গে যেসব নলকূপ থেকে পানি আসছে না, তা থেকেও পানি পাওয়া যাবে। এসব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা হলেও চূড়ান্ত তালিকা এখনও হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করছেন। তা হাতে পেতে আরও কয়েকদিন লাগবে। চূড়ান্ত তালিকা পাওয়ার পর বলা যাবে কোথায়, কী ধরনের সহায়তা জরুরি পৌঁছানো দরকার।