বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৩ ১১:২৮ এএম
আপডেট : ১২ মে ২০২৩ ১৫:৩০ পিএম
বাউফলে ১৮ চরাঞ্চলে নেই আশ্রয়কেন্দ্র, মোখায় উদ্বেগ। প্রবা ফটো
ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুল ও সিত্রাংয়ের আঘাতের ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপসহ ১৮ চরাঞ্চলের মানুষ। বিগত ঘূর্ণিঝড়গুলোতে এসব চরাঞ্চলের প্রাণহানিসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আভাস দিয়েছে, আগামী রবিবার উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এমন পূর্বাভাসে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এলাকাবাসীর কপালে। এসব চরে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ না থাকায় মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন নদীবেষ্টিত ইউনিয়ন চন্দ্রদ্বীপ। ছোট-বড় ১১টি চর নিয়ে ইউনিয়নটি গঠিত। এর একটির নাম চর ব্যারেট। এ চরে প্রায় ৩ হাজার মানুষ বসবাস করেন। ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসে নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। শুধু চর ব্যারেট নয়, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর রায়হাসেব, চর উত্তর মিয়াজান, চর কিসমত, চর নিমদী, উত্তর দিয়ারা কচুয়া, চর ওয়াডেল এলাকায়ও নেই আশ্রয়কেন্দ্র।
চর ব্যারেটের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, চর ব্যারেটে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। আর চরের চারপাশে নদী থাকায় আমরা দূরের কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও পারি না। আবার ট্রলারের ব্যবস্থা থাকলে ঘরবাড়ি, গরু-মহিষ রেখে কেউ যেতে চায় না।
সাবেক ইউপি সদস্য মো. নাগর আলী হাওলাদার বলেন, উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপের মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ অতি গুরুত্বপূর্ণ।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চন্দ্রদ্বীপ ইউপির টিম লিডার মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
চন্দ্রদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক আলকাছ বলেন, চন্দ্রদ্বীপে সাইক্লোন শেল্টার আছে মাত্র ৫টি। ঝুঁকিপূর্ণ ৬টি এলাকায় নেই কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার লিখিত আবেদন করেছি। কোনো কাজ হচ্ছে না।
ঘূর্ণিঝড়ে আরেক ঝুঁকিপূর্ণ চর চরফেডারেশন। ২০০৭ সালের সিডরে ৪৫ জনের প্রাণহানির পর অনেকেই ফেডারেশন ত্যাগ করেছেন। এখনও কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। এ ছাড়াও নদীতীরবর্তী কালাইয়া ইউনিয়নের, চরকালাইয়া, বগী, শৌলা, নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী, ধানদী, তাঁতেরকাঠি, তালতলী, কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা, বাজেমহল, চর মমিনপুর, ধুলিয়া ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া, ধুলিয়া এলাকার মানুষও ঘূর্ণিঝড় ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
এর আগে সিডরসহ বিগত ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার চরফেডারেশনে ৪৫ জন, চন্দ্রদ্বীপে ৭ জন, কেশবপুর, কালিশুরী ও কনকদিয়ায় ৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছেন। এসব চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে ফসল।
ধুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ঝড়ের পূর্বাভাস পেলে ট্রলারে করে লোকজনকে ধুলিয়ার আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে আসি।
উপজেলা ইউএনও মো. আল আমিন বলেন, বিচ্ছিন্ন জনপদ চন্দ্রদ্বীপে তুলনামূলক কম সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। ওখানে বেশ কয়েকটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাব।