সোনাগাজীতে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়ার প্রকোপ
ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩ ১২:০৭ পিএম
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের চাপ। প্রবা ফটো
হঠাৎ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে ফেনীর সোনাগাজীতে। এপ্রিল মাস থেকে এ দুই রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৯০৩ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ৭৮৮ জন ও নিউমোনিয়ায় ১১৫ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৪৩ জন। বাকিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও স্থানীয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শিশু।
এ ছাড়া গত ১০ দিনে ডায়রিয়ায় ১৫১ জন ও নিউমোনিয়ায় ৩১ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যেও বেশিরভাগ শিশু। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুদের জন্য ছয়টি শয্যা থাকলেও গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে ৪০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি ছিল। পরে ১৫ শিশুকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ভর্তি হওয়া শিশু রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। এক থেকে সাত বছর বয়সি শিশুর পাশাপাশি ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে নবজাতকও ছিল। গত মাসে প্রতি দিন গড়ে হাসপাতালে শিশুসহ ১৫-২০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান।
গত মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ থেকে প্রায় ৪৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে শিশুসহ প্রায় ৩০০ রোগী জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, পেটব্যাথা, শরীর ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার লক্ষণ নিয়ে এসেছে। ওই দিন দুপুরে ১৫ শিশুকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বর্তমানে বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ২৮ শিশু চিকিৎসাধীন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিবন্ধন বইয়ের তথ্যানুযায়ী, গত এক মাসে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত প্রায় ৯০৩ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি রোগীর মধ্যে অর্ধেকই শিশু। গতকাল দুপুরে ১৫ শিশুসহ ২৯ জনকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হলেও বিকাল পর্যন্ত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৭০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চরগণেশ এলাকার দেড় বছর বয়সি শিশু নুসরাত জাহানের মা বিবি ফাতেমা বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে তার মেয়ের প্রচণ্ড জ্বর শুরু হয়। দুধ খাওয়ানোর পর বমি করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর থেকে ডায়রিয়া শুরু হয়। সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে ভর্তি করাতে বলেন।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ বলেন, ঋতু পরিবর্তন ও ঠান্ডা-গরম, পচা-বাসি খাবার খাওয়াসহ দূষিত পানি পানে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগ, জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যাথা, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে শয্যার চেয়ে প্রতিদিন অনেক বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। সংকটেরও মধ্যে চিকিৎসকসহ নার্সরা রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।