× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিদ্যালয় মাঠ এখন গরু-ছাগলের হাট

সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩ ১১:২০ এএম

আপডেট : ০৯ মে ২০২৩ ১১:২২ এএম

কিশোরগঞ্জের আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গড়ে উঠেছে গরু-ছাগলের হাট। প্রবা ফটো

কিশোরগঞ্জের আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গড়ে উঠেছে গরু-ছাগলের হাট। প্রবা ফটো

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসানো হচ্ছে গরু-ছাগলের হাট। সপ্তাহে এক দিন এ হাট বসলেও স্কুলের শিক্ষার পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে সপ্তাহজুড়ে।

প্রায় দেড় দশক ধরে এভাবেই চলছে। মাঠ ইজারা দিয়ে একটি বিশেষ মহল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ জানিয়ে এলেও মেলেনি সমাধান। 

২০০৯ সালে নিকলীর জারইতলা ইউনিয়নের সাজনপুর গোপীরায়ের বাজারসংলগ্ন স্কুলমাঠে এ হাট গড়ে ওঠে। গত ১৪ বছরে বড় পশুর হাটে পরিণত হয়েছে মাঠটি।

সরেজমিন দেখা যায়, মাঠের একপাশে স্কুলের দেওয়াল ঘেঁষে জারইতলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণে নীল রঙের পাতলা কাপড়ের পর্দা টানানো। কিন্তু মূল তোরণসহ স্কুলে প্রবেশের সবকটি রাস্তায় গরু-ছাগল ও হাটে আসা মানুষের ভিড়। কাপড়ের পর্দা কোনো কাজেই আসছে না।

শিক্ষার্থীরা বলছে, গরু-ছাগলের আবর্জনার গন্ধে স্কুলে টেকা যায় না। বুধবারের হাটের পরের দিনও স্কুলের মাঠ স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। ফলে ওইদিনও শিক্ষার্থী কম আসে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। বর্ষাকালে সপ্তাহজুড়েই মাঠটি থাকে নোংরা।

বিদ্যালয়সংলগ্ন এক একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত গোপীরায়ের বাজারে গরু-ছাগলের হাট বসানোর কোনো অনুমোদন নেই। বাজারটি এ বছর ২৮ লাখ ১০ হাজার ৬০০ টাকায় ইজারা হয়েছে। ইজারা নিয়েছেন আঠারবাড়িয়া গ্রামের আলম মিয়া ও সাজনপুর গ্রামের কামরুল ইসলাম মানিক। প্রভাবশালী ইজারাদার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই বাজার থেকে ১ হাজার ফুট দূরে স্কুলমাঠে অবৈধভাবে গরু-ছাগলের হাট বসিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাঠটি বিদ্যালয়ের জায়গা এবং সেখানে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে। এখানে বসানো হাটের সরকারি অনুমোদন নেই। এরপরও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে উপজেলা প্রশাসন অবৈধভাবে মাঠটিকে গরু-ছাগলের হাট বানিয়ে ফেলেছে।

বুধবার এলেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ থাকে না। হাটুরেদের হইচই, গরু-ছাগলের বর্জের দুর্গন্ধ আর গবাদিপশুর চিৎকার-চেঁচামেচিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে বলে প্রধান শিক্ষক জানান। মাঠ থেকে বর্জ্য অপসারণ না করায় পরের দিন বৃহস্পতিবারসহ সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই দুর্গন্ধ স্কুলচত্বরকে বিষিয়ে রাখে।

প্রতি বুধবার স্কুলটি নামমাত্র খোলা থাকে। হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী স্কুলে এলেও বেশিরভাগই থাকে গরহাজির। এসব কারণে স্কুলে পড়ালেখা লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাঠের যে অংশে গরু-ছাগলের হাট বসানো হয়, তার চারপাশে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য ইজারাদারকে পরামর্শ দেন। তার এ সিদ্ধান্ত জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। 

এ বিষয়ে নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা পারভীন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই তিনি সংশ্লিষ্ট ইজারাদারকে স্কুলমাঠে হাট না বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) সুব্রত কুমার বণিক বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, স্কুলের মাঠে এত বছর গরু-ছাগলের হাট থাকা অসম্ভব ব্যাপার। এর আগে ঘটনাটি তাকে কেউ জানায়নি।

তিনি বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে, এ রকম কোনো কর্মকাণ্ড কখনোই মেনে নেওয়ার মতো নয়। তদন্ত করে অচিরেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে।

আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আওয়াল সবুজ জানান, হাটের দিন ছাত্র-ছাত্রী খুব কম আসে। যারা আসে, দুপুর ১২টার আগেই চলে যায়। পরের দিনও দুর্গন্ধে টেকা যায় না। বলতে গেলে স্কুলে এখন আর কোনো ভালো শিক্ষার্থী নেই।

নিকলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল হক লিটন বলেন, হাটের কারণে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। হাটের তহবিলের টাকায় হাটের জন্য স্থায়ী মাঠ নির্মাণ করা দরকার। 

অভিযুক্ত ইজারাদার আলম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বছর ২৮ লাখ ১০ হাজার ৬০০ টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছেন। মূল বাজারে জায়গার স্বল্পতা থাকায় আশপাশের বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানার ভূমি ও স্কুলমাঠের কিছু জায়গায় হাটটি বসে। হাট শুরু হয় দুপুর ২টায়। তাই বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া বিকল্প জায়গার সন্ধান করা হচ্ছে। অচিরেই হাটটি নতুন জায়গায় স্থানান্তর করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা