চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩ ২০:৩৪ পিএম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৩ ২১:০৪ পিএম
জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু। প্রবা ফটো
চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করা হয়েছিল ১৯৩১ সালে। ৩১ বছর পর ১৯৬২ সালে অন্যান্য যানবাহনের জন্যও তা উন্মুক্ত করা হয়। সেই থেকে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৬৩৮ দশমিক ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই কালুরঘাট সেতু দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। শুরুতে সেতুটি দিয়ে সর্বোচ্চ ১২ টনের গাড়ি পারাপারের অনুমোদন থাকলেও বর্তমানে তা ১০ টন। সেতুতে বিদ্যমান মোট ১৯টি পুরোনো স্প্যানের মধ্যে আটটি স্প্যান নড়বড়ে এবং ক্ষয় হয়ে গেছে। এই নড়বড়ে সেতু দিয়ে চলছে ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্দেশনায় কালুরঘাট সেতুতে সমীক্ষা চালিয়ে এসব বিষয় তুলে এনেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল। শুধু তাই নয়, বোয়ালখালীসহ পাশের পটিয়া উপজেলার (আংশিক) তিন লাখের বেশি মানুষের চট্টগ্রাম মহানগরে যাতায়াতের প্রধান পথ এই কালুরঘাট সেতু। ৯২ বছরের পুরোনো সেতুটির বিভিন্ন অংশ ক্ষয় হয়ে গেছে। ফুটো হয়ে গেছে পাটাতন। এ সেতুর ওপর দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী ট্রেন ও অন্যান্য যান চলাচল করে। একমুখী সেতুর এক পাশ থেকে যানবাহন ও মানুষ পার হলে অন্য পাশ বন্ধ থাকে। সেই সেতু ধরেই রেল কক্সবাজার যাবে বলে রেল মন্ত্রণালয় প্রত্যাশা করছে।
শনিবার (৬ মে) প্রায় শতবর্ষী এই সেতুর সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন ও ফেরি চালুর বিষয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর সেতুর বর্তমান অবস্থা নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কথা শোনেন। সবাই কালুরঘাট সেতুর দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরেন।
প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সেতুর সংস্কারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা। তিনি বলেন, ’কালুরঘাট সেতুর অবস্থা খুব খারাপ। সংস্কার ছাড়া কক্সবাজার পর্যন্ত ভারী ইঞ্জিনের ট্রেন নেওয়া সম্ভব নয়। এরই মধ্যে বুয়েটের পরামর্শক দল কালুরঘাট সেতুটির নাজুক অবস্থা হওয়ায় সংস্কার করে ট্রেন চলাচলের পরামর্শ দিয়েছেন। তাই সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ’সেতুটি ১৯৩১ সালে চালুর পর প্রথম ভারী সংস্কার হয়েছিল ১৯৮৬-৮৭ সালে। দ্বিতীয় ভারী সংস্কার হয়েছিল ২০০৪-০৫ সালে।’
সভায় বোয়ালখালী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এসএম সেলিম বলেন, ’নতুন কালুরঘাট সেতুর নির্মাণের কথা বলতে বলতে দুজন এমপি মারা গেছেন। বোয়ালখালীর মানুষ অনেক কষ্টে আছেন। ভোট চাইতে গেলে বোয়ালখালীবাসী নতুন কালুরঘাট সেতুর কথা বলেন।’
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ’কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট রেল সেতুতে বিদ্যমান রেললাইন আপাতত সংস্কার করে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তাই জুন মাসে সেতুটির সংস্কারকাজ শুরু হবে। মানুষের চলাচলের জন্য ওয়াকওয়েসহ পুরো কাজ শেষ করতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কালুরঘাট সেতু ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হবে। সেতু সংস্কারের সময় বিকল্প হিসেবে কর্ণফুলী নদীতে ফেরি চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
রেলপথ সচিব আরও বলেন, ’পুরো সেতুর সংস্কারকাজ শেষ করতে ছয় মাস লাগবে। তবে সেতুতে বিদ্যমান রেললাইনের সংস্কারকাজ তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হবে। এই তিন মাস ট্রেন (চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুট) চলাচল বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি সব ধরনের যান চলাচলও বন্ধ থাকবে। সেতুতে যান চলাচল বন্ধ থাকলে মানুষের সাময়িক অসুবিধা হবে। তবে সংস্কারকাজ শেষ হয়ে গেলে আর অসুবিধা হবে না। এরই মধ্যে নতুন সেতু নির্মাণের নকশা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। নতুন সেতু হবে ডাবল লাইনের। সেতু সংস্কারের সময় কিছু যানবাহন শাহ আমানত সেতু দিয়ে পাঠানো হলে আর সমস্যা হবে না। ফেরির সংখ্যা দুটির পরিবর্তে চারটি করা যায় কি না, সেটি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হবে।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন, রেলওয়ে পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরী, বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান, বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরীসহ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।