ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩ ১৫:৫৪ পিএম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৩ ১৯:২৯ পিএম
ফুলবাড়ীর পৌর বাজারের এক দোকানী বিক্রি করছেন খোলা চিনি। প্রবা ফটো
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বাজারগুলোতে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা চিনি মিললেও দাম নেওয়া হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১১৩ থেকে ১১৪ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে দাম আরও কম ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, গত ১৫ দিনে প্রতি কেজি খোলা চিনিতে দাম অন্তত ২০ টাকা বেড়েছে।
চিনির দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্নের দামও বেড়েছে। এমনকি চায়ের দামও বাড়িয়েছে দোকানিরা।
স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, তীর, ফ্রেস, দেশবন্ধু, ইগলু, এস আলমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঈদের আগ থেকে প্যাকেট চিনি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে প্যাকেট চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।
চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত মাসে ভোক্ত অধিকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ১০৫ টাকা। তবে সে দাম রাখছে না কোনো দোকানিই।
খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে। তাই ভোক্তা পর্যায়েও তার প্রভাব পড়ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি ভেদে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চিনি কিনতে হচ্ছে ৬ হাজার ২৫০ থেকে ৬ হাজার ৩০০ টাকায়। এতে প্রতিকেজি চিনির ক্রয়মূল্য পড়ে যাচ্ছে ১২৫ থেকে ১২৬ টাকা। ফলে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা। প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ না থাকায় বাজারের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (৬ মে) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার পৌর বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে কোথাও প্যাকেট চিনির অস্তিত্ব মেলেনি। খোলা চিনি সামান্য পরিমাণে পাওয়া গেলেও ১৩০-১৩২ টাকার কমে কেনা যাচ্ছে না।
আবার চিনির দাম বাড়ায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টান্নের দামে।
পৌর বাজারে জিলাপি কিনতে আসা গৃহবধূ আশা লতা বলেন, গত সপ্তাহে চিনির জিলাপি ২০০ টাকা কেজিদরে কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
সুজাপুর গ্রামের ব্রজেন্দ্র নাথ রায় বলেন, এক কেজি খোলা চিনি ১৩০ টাকা। এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
কাঁটাবাড়ী এলাকার খুচরা বিক্রেতা কপিলা পাল বলেন, ঈদের আগ থেকেই প্যাকেট চিনির সরবরাহ নেই। এ কারণে খোলা চিনির উপর চাপ পড়ছে। তাই দাম বাড়তে পারে।
ফুলবাড়ী পৌর বাজারের মামা-ভাগ্না স্টোরের সুশীল পাল বলেন, ঈদের আগে যে খোলা চিনি ১১৩ থেকে ১১৪ টাকা বিক্রি হয়েছে এখন তা ১২৫ থেকে ১২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলাকা ভেদে আবার ১৩০-১৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী এক সপ্তারে মধ্যে আরও ৬ থেকে ৮ টাকা বাড়তে পারে বলে পাইকাররা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে না কথার শর্তে একাধিক পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন, পাইকারী বা খুচরা পর্যায়ে নয়, যে কারসাজি হচ্ছে তার সবটাই হচ্ছে কোম্পানি পর্যায়ে। কোম্পানিগুলো প্যাকেট চিনি সরবরাহ করছে না। প্যাকেট চিনির গায়ে মূল্য থাকায় খেয়ালখুশি মতো দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। তাই প্যাকেট চিনি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে তারা।
তারা বলেন, খোলা চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি লাভের আশায় সম্ভবত প্যাকেটজাত চিনি ভেঙে খোলা চিনি হিসেবে সরবরাহ করা হচ্ছে।
দিনাজপুর জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মমতাজ বেগম রুনি বলেন, চাহিদার তুলনায় চিনি সরবরাহ কমের কারণে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কেউ যেন বাড়তি দামে চিনি বিক্রি করতে না পারে সে জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।