× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিলেট সিটি নির্বাচন

আরিফকে ঠেকানোর কৌশল ভাবছে আওয়ামী লীগ

চয়ন চৌধুরী, সিলেট

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩ ১১:০৬ এএম

আপডেট : ০৬ মে ২০২৩ ১১:৪৩ এএম

আরিফুল হক চৌধুরী। ফাইল ফটো

আরিফুল হক চৌধুরী। ফাইল ফটো

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অংশগ্রহণ এখনও নিশ্চিত নয়। আগামী ২০ মে তিনি আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বললেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ভোটের লড়াইয়ে থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

তিনি ইভিএমের বিরোধিতার পাশাপাশি নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে ‘বহিরাগত’ বলে অভিহিত করেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও আরিফকে ঠেকানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। টানা ১০ বছর মেয়রের দায়িত্বে থাকা আরিফকে কী বলে ঘায়েল করতে হবে, সেই কৌশল নির্ধারণ করছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে আরিফের বিরুদ্ধে ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন’ ও ‘অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের’ অভিযোগ তুলেছে ক্ষমতাসীন দল।

২০১৩ সাল থেকে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফ। বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিভিন্নভাবে। শেষ পর্যন্ত তিনি আগামী ২১ জুন ভোটের মাঠে থাকলে তাকে ঠেকাতে চায় আওয়ামী লীগ। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লন্ডন প্রবাসী হওয়ায় একটা ইস্যু তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন মেয়র আরিফ।

আরিফের বিরুদ্ধে অপরিকল্পিত উন্নয়নের অভিযাগ প্রায় নিয়মিত উঠেছে; মানববন্ধন পর্যন্ত হয়েছে। নগরীর আম্বরখানা এলাকায় কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া ফেলে রাখায় নির্মাণাধীন ড্রেনে পড়ে কবি বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যুর পর তীব্র সমালোচনা হয়। এ ছাড়া বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের নামে রাস্তাঘাটে খোঁড়াখুঁড়ি, খোলা ড্রেনের যন্ত্রণা ভোগ করছেন নগরবাসী।

গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নগরীর এক-তৃতীয়াংশ দুই সপ্তাহের বেশি সময় জলমগ্ন ছিল। নগরীতে রাস্তাঘাট প্রশস্ত হলেও যানজট বা ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন মেয়র আরিফ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আরিফের ‘আগামীর সিলেট’ শিরোনামে ১৩ দফা ইশতেহারে এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস ছিল। কিন্তু তিনি তেমন কিছু করতে পারেননি। এসবকে ইস্যু বানাতে চায় আওয়ামী লীগ। গত ২৭ এপ্রিল নির্বাচন সামনে রেখে মহানগর আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় বর্তমান মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে লুটপাটের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।

নগরীর তালতলা এলাকার একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে সভায় বিএনপি নেতা আরিফকে টার্গেট করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, গত ১০ বছরে সরকার সিলেটে প্রচুর টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও হয়নি। বরং বর্তমান মেয়রের নেতৃত্বে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। দিন দিন জনদুর্ভোগ বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সদস্যকে নৌকার মাঝি হিসেবে মাঠে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ওই সভায় নৌকার মেয়রপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানও বরাদ্দের বিপরীতে নগরীর উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর আরামবাগ এলাকার অভিজাত এক কনভেনশন সেন্টারে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথ কর্মিসভা হয়। এতে বর্তমান মেয়র আরিফের তীব্র সমালোচনা করে নৌকার প্রার্থী আনোয়ার বলেন, নগরীর উন্নয়নের জন্য সরকার ২ হাজার ৮শ কোটি টাকা দিয়েছে। গত বছর ড্রেন ও সড়ক সংস্কারের জন্য ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মেয়র আরিফের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও লুটপাটের ফলে সিলেটবাসী কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হলে সিলেটকে বদলে দেবেন। পর্যটন ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নের পাশাপাশি শুধু সিলেটের জন্য ৩শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র করার আশ্বাস দেন তিনি। নগরপিতা নয়, সেবক হিসেবে আমৃত্যু নগরবাসীর সেবা করার কথাও বলেন তিনি।

এক সভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনও আরিফের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী নগরীর উন্নয়ন দেখে সিলেটের জন্য দুঃখ হয় উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সিলেটের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। যে কারণে সিলেটের মাটি ও মানুষের কল্যাণে তিনি বরাবরই আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে গেছেন। সিলেটের মেয়র পদে দলীয় কেউ না থাকার পরও তিনি উজাড় করে দিয়েছেন সবকিছু। কিন্তু দুর্ভাগ্য, অপরিকল্পিত উন্নয়নের খেসারতস্বরূপ নগরবাসীকে এখনও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি ‘শ্রীভূমি’ হিসেবে পরিচিত সিলেট রক্ষায় এবার দলীয় নেতাকর্মীদের সব বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনযুদ্ধে নামার আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগের অভিযোগ ও নগরীর উন্নয়ন বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত নির্বাচনের সময় আরিফুল হক চৌধুরী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। সেই ইশতেহারের কতটুকু তিনি বাস্তবায়ন করেছেন তা নিজেরই জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। তা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। এ ছাড়া সরকার থেকে তাকে কী পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাও সবার জানার অধিকার রয়েছে। এই বরাদ্দের কতটুকু কাজ তিনি করেছেন তা প্রকাশ করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরুর আগে প্রার্থীদের প্রচারণার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যেভাবে বিধিবিধান লঙ্ঘন করে প্রতীকসহ ভোট চাওয়া হচ্ছে, তাতে নাগরিক সমাজ হতবাক। ক্ষমতাসীন দল যেভাবে আইনকানুন, বিধিবিধান ভূলুণ্ঠিত করছে তা বিবেকপ্রতিবন্ধীর আচরণ বলে মনে হয়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ বা সমালোচনাকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে চাইছেন না মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, গত বন্যার সময় সিলেটে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। তাই আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ অবান্তর। আরিফ মনে করেন, নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নগরবাসী তার কাজের মূল্যায়ন করবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসছে না : নানক


পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি আসন্ন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেছেন, পরাজয়ের ভয়েই বিএনপি নির্বাচনে আসতে চাইছে না। তারা জনগণের অবস্থান বুঝতে পেরেছে। এবার সিলেটসহ দেশের অন্য পাঁচ সিটি করপোরেশনে নৌকার পক্ষে গণজোয়ারের খবর তাদের অজানা নয়। তা ছাড়া তাদের অতীত কার্যক্রম জনগণের মনে আছে। তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।

গত শুক্রবার বিকালে সিলেটের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নানক এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি সিলেটের রামের দিঘিরপাড় এলাকার অভিজাত একটি হোটেলে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদকসহ দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও সিলেট সিটি ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা