× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মোংলায় বিলুপ্তপ্রায় সামুদ্রিক মাছ বিক্রির মহোৎসব

আবুল হাসান, মোংলা

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩ ১৬:৪২ পিএম

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। প্রবা ফটো

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। প্রবা ফটো

সুন্দরবনের নদনদীসহ সাগরে নির্বিচারে সামুদ্রিক মাছ শিকার এবং অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধভাবে মাছ ধরার কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে প্রায়-বিলুপ্ত প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। জেলেদের শিকার করা এসব বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ অবৈধভাবে মোংলা বাজারে অহরহ ঢুকছে। হাঁকডাক দিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রি হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধভাবে নির্বিচারে সামুদ্রিক মাছ শিকার করা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগরে মাছের সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৎস্য ও বনকর্তাদের উদাসীনতা এবং নজরদারির অভাবে বিলুপ্ত প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রাণীও হারিয়ে যাবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মোংলা মাছ বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বিলুপ্ত প্রজাতির কাইন, বাইন ও শাপলাপাতাসহ কয়েক প্রজাতির মাছ বিক্রি চলছে। ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে এসব মাছ কেনাবেচা হচ্ছে। মোখলেছুর রহমান নামে এক ক্রেতা জানান, কোন মাছ নিষিদ্ধ সেটা জানেন না, বিক্রেতারা বিক্রি করছে তাই কিনছেন তিনি। এদিন ৬০০ টাকা কেজি দরে দেড় কেজি শাপলাপাতা মাছ কিনেছেন বলে জানান তিনি। তবে বিলুপ্ত প্রজাতির শাপলাপাতা মাছ বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, বাজারের আড়তদারদের কাছ থেকে সকালে কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেছেন তিনি। আড়তে না এলে এই মাছ কেনা তার পক্ষে সম্ভব না বলে তিনি জানান।

মোংলা মৎস্য বাজার সমবায় সমিতির সভাপতি আফজাল ফরাজির দাবি, নিষেধ করার পরেও আড়তদাররা কথা শোনেন না। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটারের বেশি, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। এই জলভাগে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে ১৩টি বড় নদনদীসহ ৪৫০টির মতো খাল। বনের এই জলভাগে হাঙ্গর, কাইন, বাইন, শাপলাপাতা, পোটকা শুশুক ও ডলফিনসহ বিলুপ্ত প্রায় ৬৪ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এসব বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ ধরা, আহরণ, পরিবহন, মজুদ ও বিক্রি সম্পূর্ণ বেআইনি বলে বন বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আইন ভেঙে এসব বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ ধরাসহ অন্যান্য কাজ করলে শাস্তির ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনই বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ শিকার করে নদীপথে মোংলা বাজারে যাচ্ছে জেলেরা। একই সঙ্গে এই মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন মাছ বাজারের ব্যবসায়ীরা।

মোংলা বাজার মনিটরিং কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মোংলার সমন্বয়কারী মো. নুর আলম শেখ জানান, এসব মাছ শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ জেনেও অতি-মুনাফালোভীরা প্রকাশ্যে এই প্রজাতির মাছ বেচাকেনা করছেন। এ ক্ষেত্রে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতা ও কঠোর নজরদারির অভাবকে দায়ী করেন তিনি।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক রানা দেবকে বন বিভাগের দায়িত্বে অবহেলার কথা জানালে তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিস থেকে মোংলা বাজার ২০ কিলোমিটার দূরে। সময়মতো সেখানে গিয়ে অভিযান চালাতে পারি না। পৌঁছার আগেই মাছ বিক্রি করে ফেলেন ব্যবসায়ীরা।’

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, যেসব মাছ ব্যবসয়ী এই অবৈধ কাজ করেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। তারপরও বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীপথে বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ বাজারে আসছে স্বীকার করে তিনি আরও কঠোর অভিযান চালানোর পক্ষে মত দেন।

বাংলাদেশের সাগরে মাছের মজুদের কোনো সঠিক হিসাব নেই। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে এবং বঙ্গোপসাগরে মাছের পরিমাণ কমছে এবং কিছু কিছু সামুদ্রিক প্রজাতির মাছ অনেকটা নিঃশেষ হতে চলেছে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিশ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোল্জি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রউফ জানান, সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। তারা বিলুপ্ত প্রজাতির মাছগুলোকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে জেলে, মাছ ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের নিরুৎসাহিত করার জন্য ব্যাপক প্রচার চালাতে পারেন। এভাবে সচেতন করতে পারলে বিলুপ্তির ঝুঁকি কমবে। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন থেকে এ জাতীয় মাছ শূন্য হয়ে যেতে পারে।

এদিকে, সরকার বিপদাপন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর সুরক্ষায় উদ্যোগী হয়ে গত ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল সংশোধন করে বিলুপ্ত প্রজাতির অনেক মাছ অন্তর্ভুক্ত করে হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা