ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৩ ১২:২৪ পিএম
নিজ দোকানের সামনে মাসুদ রানা।
জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী ২২ বছর বয়সি তরুণ মাসুদ রানা। দুই পা হাঁটুর নিচ থেকে অচল। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। শুধু লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেন।
অভাব-অনটনের সংসারে তার চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। বাবা বেঁচে নেই। বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের স্বল্প আয়ের সংসারে মাসুদ রানার ঠাঁই হলেও তিনি ভাইয়ের জীবনে বোঝা হয়ে থাকতে চাননি। সমাজের আর দশটা মানুষের মতোই আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চান প্রতিবন্ধী এই তরুণ।
মাসুদ রানা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি ইউনিয়নের চরসাহাপুর গ্রামের ঈমান আলীর ছেলে। মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য নিতে চান না তিনি। আত্মপ্রত্যয়ী মাসুদ রানা স্বপ্ন দেখেন ছোট পরিসরে হলেও ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করবেন।
সরেজমিন দেখা যায়, নিজ বাড়ির সংলগ্ন সড়কের পাশে কাঠের চৌকির ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে দোকান বানিয়ে চা, বিস্কুটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেচাকেনা করছেন। তার দোকানের বয়স প্রায় ২ মাস হলো। প্রতিদিন যা বেচাকেনা হয় দিনশেষে তা বড় ভাইয়ের হাতে তুলে দেন।
মাসুদ রানা বলেন, গরিবের যন্ত্রণা বেশি। কিন্তু প্রতিবন্ধী হয়েও কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। সংসারে অভাব থাকলেও কখনও মানুষের কাছে হাত পেতে সহযোগিতা চাইনি। ছোটবেলা থেকে ভিক্ষাবৃত্তি অপছন্দ করি। আমার বড় ভাই দোকান করে দিয়েছে এতেই সন্তুষ্ট।
তিনি আরও বলেন, মনোবল আর আত্মপ্রত্যয় থাকলে প্রতিবন্ধীরাও স্বাবলম্বী হতে পারে। আমার দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বেচাকেনা হয়। পাশাপাশি তিন মাস পর পর প্রতিবন্ধী ভাতা পাই।
মাসুদ রানার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক বলেন, হাঁটতে পারে না বলে স্কুলে যেতে পারেনি মাসুদ। দীর্ঘদিন হাঁটু গেড়ে চলাচল করেছে। অনেক চেষ্টা করে পাবনা সমাজসেবা থেকে তার জন্য একটি হুইলচেয়ার পাওয়া গেছে। এখন হুইলচেয়ারেই চলাফেরা করে।
তিনি আরও বলেন, বাড়ির সামনে টিনের ছাউনি দিয়ে দোকান করে দিয়েছি। এখানে বসে টুকটাক বেচাকেনা করে। পরে টাকার ব্যবস্থা করে আরও ভালো করে দোকানঘর নির্মাণ করে দেব।
পাবনা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাশেদুল কবির বলেন, প্রতিবন্ধী মাসুদ রানার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছি এবং তাকে একটি হুইলচেয়ার দিয়েছি। তার আগ্রহ থাকলে দোকানের পরিসর বাড়ানোর জন্য সহজ শর্তে ও বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হবে।