নেত্রকোণা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩ ১৯:৪৭ পিএম
আপডেট : ০৩ মে ২০২৩ ২১:০৯ পিএম
নিহত স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণ। প্রবা ফটো
নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলায় স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে কাউছার মিয়া (১৮) নামে এক কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার (৩ মে) বিকালে নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ’হত্যাকাণ্ডের পর উপজেলার বাউসী ইউনিয়নের প্রেমনগর গ্রামের একটি জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল কাউছার। বুধবার বেলা ৩টার দিকে সেখান থেকে তাকে আটক করা হয়। কাউছার প্রেমনগর গ্রামের সামছু মিয়ার ছেলে এবং নিহত স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণও একই গ্রামের নিখিল বর্মণের মেয়ে।’
মঙ্গলবার বিকালে স্কুল থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় ছালিপুরা এলাকায় কাউছার মুক্তি বর্মণকে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে কাউছারকে আটকের পর বুধবার বিকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ’কাউছার মুক্তি বর্মণকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রেম নিবেদন ও উত্ত্যক্ত করে আসছিল। মুক্তি প্রেমে সাড়া না দেওয়ায় কাউছার মঙ্গলবার বিকালে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মুক্তি বর্মণকে ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। আশপাশের লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বিকাল ৫টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ’হত্যার ঘটনার পরই কাউছারকে ধরতে জেলা পুলিশের পক্ষে চারটি দল চার ভাগে বিভক্ত হয়ে মাঠে নামে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বুধবার বেলা ৩টার দিকে প্রেমনগর গ্রামের একটি জঙ্গল থেকে কাউছারকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাউছার হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) লুৎফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খালিয়াজুড়ি সার্কেল) রবিউল ইসলাম।
নিহত স্কুলছাত্রীর বাবা নিখিল বর্মণ বলেন, ‘আমার ৬ মেয়ে। সবাই মেধাবী। মুক্তিও খুব মেধাবী ছিল। স্কুলে তার রোল নম্বর ছিল চার। মেয়েটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তা আর পূরণ হলো না। বখাটে কাউছার আমার সেই স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে কাউছার আমার মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি তার পরিবারকেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এতে কাউছার আরও ক্ষিপ্ত ওঠে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে মুক্তির পথরোধ করে তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে কাউছার। আমি এ হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার চাই।’
মুক্তি বর্মণের সহপাঠী লক্ষ্মী বর্মণ জানায়, সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে ছালিপুরা এলাকায় কাউছারকে হাতে দা নিয়ে আমগাছের নিচে বসে থাকতে দেখে তারা। বিকালে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাউছার একই জায়গায় বসা ছিল। এ সময় হঠাৎ সে দা দিয়ে মুক্তি বর্মণকে কোপাতে শুরু করে। দুটি কোপ মুক্তি তার ছাতা দিয়ে ফেরালেও একপর্যায়ে তার মাথায় ও ঘাড়ে কোপের আঘাত লাগলে সে মাটিতে পড়ে যায়। তখন সহপাঠীরা ফেরাতে গেলে দা উঁচিয়ে তাদেরও ভয় দেখায় কাউছার। পরে বিষয়টি দেখে স্থানীয়রা ছুটে গেলে কাউছার পালিয়ে যায়।
প্রেমনগর গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হক বলেন, ‘কাউছার খুব বখাটে ছেলে। সে মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিল। সে এলাকার স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের প্রায়ই রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করত। দিনদুপুরে একটা মেয়েকে সে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। এ ঘটনার পর এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন হলে মেয়েরা কীভাবে লেখাপড়া করবে? আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’
এদিকে মুক্তি বর্মণকে হত্যার বিচার দাবিতে বুধবার দুপুরে বারহাট্টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, ইয়ূথ গ্রুপ, কমিউনিটি ফোরাম ও সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।
বারহাট্টা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাইনুল হক কাশেম বলেন, ‘আমার উপজেলায় এমন নৃশংস ঘটনা আর কখনও ঘটেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘাতককে গ্রেপ্তার করায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। জঘন্য এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাই, যাতে আর কোনো বখাটে এমন ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়।’
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা না হলেও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানায় পুলিশ।