রাঙামাটি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ মে ২০২৩ ১৬:০৬ পিএম
আপডেট : ০২ মে ২০২৩ ১৬:৪০ পিএম
দুর্গম পাহাড়ে তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। প্রবা ফটো
সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। সারা বছর দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানির অভাবে নদী ও ঝিরির ঝর্ণার পানি পান করে জীবন ধারণ করেন। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি-ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। শুকিয়ে গেছে বেশ কিছু কুয়ার পানিও।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান সড়ক থেকে দুই মাইল দূরে যেতে অবস্থিত রাঙামাটির কাউখালী উপজেলাধীন চেলাছড়া ওপর পাড়া গ্রাম। যুগ যুগ ধরে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে গ্রামটি। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম মোটরসাইকেল। এই গ্রামে বসবারত ৪২ পরিবারের সবাই কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। তাদের খাওয়া, রান্না করাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব কাজের জন্য একটি মাত্র কুয়ার উপর নির্ভর। সকালে আর বিকালে নারীদের পানির জন্য লম্বা লাইন দেখা যায় কুয়ার পাশে। তাদের অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেক সময় পানির জন্য মারামারিও লেগে যায় তাদের মধ্যে। খাবার পানিসহ ব্যবহার্য্য পানির তীব্র সংকটে ভুগছে ওই গ্রামের মানুষ।
পাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেখিন চাকমা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই সময়ে আমাদের গ্রামে পানি শুকিয়ে যায়। তখন আমাদের পানির অভাবে থাকতে হয়। ৮ থেকে ১০ ফুট কুয়া খুড়লেও অনেক সময় পানি পাওয়া যায় না। পানির জন্য আমরা খুব কষ্টে আছি।’
একই গ্রামের সাধনা দেবী বলেন, ‘পানি আনা নেওয়া করতে আমাদের ঘরের কাজগুলো করার সময় হয় না। পানির কলসি কোলে করে নিয়ে পাহাড়ে উঠে অনেক দূরে গিয়ে পানি আনতে হয়। একবার পানি আনতে গেলে দিন চলে যায়। সকালে গেলে দুপুরে কাজ করা হয় না আর দুপুরে গেলে বিকেলে কাজ হয় না।’
পূণ্য সেন চাকমা বলেন, ‘পানি একদম বলতে গেলে নাই। এইসময় আসলে ছড়াগুলো মোটামুটি শুকনা হয়ে যায়। আমরা ঠিক মতো গোসল করতে পারি না, এই রকম অবস্থায় আছি আমরা। আমাদের এলাকায় রিং ওয়েল বা টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা হতো তাহলো ভালো হতো।’
সূর্য তারা চাকমা বলেন, ‘অনেক সময় এমন অবস্থা হয় পানির জন্য মারামারি করার অবস্থা হতে হয়। পানির জন্য লম্বা লাইন ধরতে হয়, কে আগে পানি নিতে পারে প্রতিযোগিতা হয়। পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। মাঝে মাঝে পানি নিয়ে ঘরে যেতে রাত হয়। পানি জন্য খুব কষ্টে আছি।’
৯৯ নম্বর ঘাগড়া মৌজা চেলাছড়া ওপর পাড়ার গ্রাম প্রধান পূণ্য বিকাশ চাকমা বলেন, ‘আমাদের চেলাছড়া ওপর পাড়া এলাকায় পানির সংকট একটু বেশি। যেহেতু পাহাড়ি এলাকা শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। এই পানির জন্য এলাকার মানুষের অনেক কষ্ট হয়। গ্রামে প্রায় ৪২ পরিবারের মতো মানুষের বসবাস। আগে জেলা পরিষদ থেকে পাবলিক হেলথের মাধ্যমে জিএসএফ লাইন ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে পাহাড় ধসের দুর্যোগের কারণে তাও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কষ্ট যে পরিমাণ হচ্ছে তা বলার মতো না। সারাদিন কাজ কর্ম করে গোসলের পানিও পাওয়া যায় না। শুধু মাত্র হাত ধুয়ে গোসল না করে থাকতে হচ্ছে।’
স্থানীয়রা জানান, ইতিমধ্যে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু উপজেলায় এখন বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতে খাবার পানির জন্য মূলত প্রাকৃতিক ছড়া, ঝিরি ও কুয়ার পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এ জায়গাগুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে খাওয়ার পানির জন্য ওইসব গ্রামবাসীকে দূর থেকে পায়ে হেঁটে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অনেক সময় কুয়ার পানি পান করে বিভিন্ন এলাকার মানুষ নানা রোগে ভুগছে। প্রতিবছর পানিবাহিত রোগে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। তবে এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।
রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবং মানুষের যে প্রতিদিনের চাহিদা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানির কিছুটা সংকট হচ্ছে। তবে আমাদের চেষ্টা আছে চলমান বরাদ্দে পানির উৎস স্থাপনের যে কাজগুলো আছে সেগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার।’
তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি মূলত পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে বিছিন্ন ভাবে যে গ্রামগুলো আছে সেগুলো পানির সরবরাহের আওতায় আনার জন্য আমাদের সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবারাহ প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ব্যাজ প্রকল্পের পানির সরবরাহ সিস্টেম ১৮০ টি স্থাপন করেছি। সেগুলো এই অর্থ বছরে শেষ হবে এবং পুরোদমে চালু করে দিব। পাশাপাশি গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য রাঙামাটির দশ উপজেলায় ১০টি স্থান নির্বাচন করে ইতিমধ্যে প্রকল্প পরিচালক মহোদয়ের দপ্তরে পাঠিয়েছি আশা করছি। এই অনুমোদন বাস্তবায়ন হলে পানির সংকট অনেকটা দূর হবে।