শেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৪৫ পিএম
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:০৫ পিএম
শেরপুরে এক বছরে কবর থেকে অর্ধশতাধিক কঙ্কাল চুরি। প্রবা ফটো
মৃত্যুর পর স্বজনদের মরদেহটি কবরে থাকবে শান্তিতে এ প্রত্যাশা সবারই। কিন্তু সম্প্রতি শেরপুরের নকলা উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন কবরস্থান থেকে নিয়মিত কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এক বছরে চুরি গেছে অর্ধশতাধিক কঙ্কাল। গত এক সপ্তাহে নকলার চরমধুয়া গ্রামের দুটি কবরস্থান থেকে পাঁচটি কঙ্কাল চুরি করতে আসে চোরের দল। এ সময় একটি লাশের পচন ধরায় ফেলে রেখে চারটি কঙ্কাল চুরি করে নিয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশকে জানানোর পরও চোরচক্রকে গ্রেপ্তারে কোনো তৎপরতা নেই। এতে ওই গ্রামসহ আশপাশ গ্রামের মৃত ব্যক্তির স্বজনরা আতঙ্কে রয়েছেন, কখন চুরি হয়ে যায় লাশ।
জেলায় উল্লেখযোগ্য নকলার কায়দা বাজারদী সর্বজনীন গোরস্থান থেকে ১১টি, টালকি ইউনিয়নে রামেরকান্দির কবরস্থান থেকে তিনটি, ধনাকুশা গ্রামের সামাজিক কবরস্থান থেকে ছয়টি, চরমধুয়া মধ্যপাড়া গোরস্থান থেকে সাতটিসহ নালিতাবাড়ির যোগানিয়া ইউনিয়নের গেরামারা গ্রাম থেকে সাতটি, কাঁকরকান্দি ইউনিয়ন থেকে আটটি, সদর উপজেলার রৌহা সর্বজনীন কবরস্থান থেকে ১৪টি, ফটিয়ামারী সর্বজনীন কবরস্থান থেকে ১১টিসহ কয়েক বছরে শতাধিক কঙ্কাল চুরি হয়েছে।
চরমধুয়া গ্রামের ৭৮ বছরের বৃদ্ধা নুরজাহান। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে হারিয়েছি দেড় বছর আগে। তাকে কবর দেওয়া হয়েছিল বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে। একই কবরস্থানে তার ভাতিজা জবা মাস্টারকেও তিন মাস আগে কবর দেওয়া হয়। তাদের দুটি কঙ্কালই চুরি হয়ে গেছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই কবরে বড় গর্ত দেখে কাছে গিয়ে দেখি কবরের কঙ্কাল নেই।’
একই ঘটনা ঘটেছে পাশের গ্রাম ডিগ্রির চরের আরেকটি কবরস্থানে। সেখানে তিনটি কবর খুঁড়ে দুটি কঙ্কাল চুরি করে এবং একটি পচনধরা সদ্যমৃতদেহ ফেলে রেখে যায় কে বা কারা। ঘটনার পর থেকেই বৃদ্ধা মালেকা বেগম খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে চোখের পানি ফেলছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘স্বামী মরছে যতটুকু কষ্ট পাইছি তার চেয়েও বেশি কষ্ট পাইতাছি লাশ চুরি যাওনের পর।’
ঘন ঘন লাশ চুরি এ উপজেলার মানুষ আর দেখতে চায় না। তাদের দাবি এ ন্যক্কারজনক চুরির পেছনে যারাই জড়িত থাকুক প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনবে। নিশ্চিত করবে পরপারে চলে যাওয়া মানুষের ঘুমিয়ে থাকার নিশ্চয়তা।
নকলা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের কবরস্থান থেকে গত এক বছরের ব্যবধানে পঞ্চাশের অধিক কঙ্কাল চুরি হওয়ায় মরদেহ দাফনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক মো. সাইফুল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কঙ্কাল চুরির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’