ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ২০:১৫ পিএম
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু। স্মৃতি বেগম।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ভৈরব পৌর শহরের চণ্ডিবের মোল্লাবাড়ি-সংলগ্ন ওই অনিবন্ধিত মাতৃসদনে সন্তান প্রসবের সময় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত গৃহবধূ পৌর শহরের কালিপুর দক্ষিণ পাড়ার জামাল মিয়ার মেয়ে স্মৃতি বেগম। মেয়েকে হারিয়ে এবং নবজাতকের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ভেঙে পড়েছেন স্মৃতির মা-বাবা।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর বেলাবতে দুই বছর আগে বিয়ে হয় স্মৃতির। সন্তান প্রসবের আগে ভৈরবে বাবার বাড়িতে এসেছিলেন। শনিবার প্রসব ব্যথা শুরু হলে বেলা ৩টার দিকে তাকে ওই মাতৃসদনে নেওয়া হয়। সেখানকার শামিমা আক্তার ও আইরিন আক্তার নামে দুজন মিডওয়াইফ তাকে ডেলিভারি করতে এপিসিওটমি করে বাচ্চা প্রসব করান। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বজনরা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চাইলে প্রথম দিকে তারা বাধা দেন, পরে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে চিকিৎসার জন্য বাজিতপুর ভাগলপুর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্মৃতির ভাবি শাহানা বলেন, ‘এপিসিওটমি করতে চাইলে আমরা বাধা দিলেও তারা মানেনি। জোর করে এপিসিওটমি করার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। তারা আমার ননদকে মেরে ফেলেছে। তারা কোনো ডাক্তার না।’
নিহতের স্বামী সজিব মিয়া বলেন, রগ কেটে ফেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার স্ত্রী মারা গেছে বলে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন।
নিহতের বাবা জামাল মিয়া জানান, দোষীদের শাস্তি চাই। আমার মতো যেন কোনো বাবার কোল খালি না হয়।’
মাতৃসদনের অভিযুক্ত দুই মিডওয়াইফ শামিমা আক্তার ও আইরিন আক্তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কথা স্বীকার করে বলেন, বাচ্চা সুস্থভাবে ডেলিভারি হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য ওষুধ ব্যবহার করায় রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছিল। হঠাৎ পেট ব্যথা হওয়ায় রোগীর স্বজনদের আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর জন্য অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। পরে শুনেছেন মারা গেছে। তারা প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জনের নরমাল ডেলিভারি করান। তারা এ বিষয়ে ট্রেনিংপ্রাপ্ত।
ভৈরব রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারপারসন কিশোরগঞ্জ জেলা সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা সোলায়মান বলেন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি একটি সেবামূলক সংস্থা। এখানে হাজার হাজার গর্ভবতী মায়েদের প্রসবসেবা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা এখানে নিয়মিত আসেন। তিনিসহ ভৈরবে একটি কমিটি রয়েছে। তারা নিয়মিত তদারকি করেন। নিহত গৃহবধূর ঘটনাটি দুঃখজনক। দুজন মিডওয়াইফ ও একজন ক্লিনার নিয়মিত এখানে সেবা দেন। তিনি যতটুকু জেনেছেন প্রসবের পর বাচ্চা ও মা সুস্থ ছিল। চিকিৎসায় প্রসূতির রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছিল।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বলেন, ভৈরব রেড ক্রিসেন্ট নামে কোনো নিবন্ধিত হাসপাতাল বা মাতৃসদন নেই। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভৈরব থানার ওসি মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, কোনো অভিযোগ পাননি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।