মঈনুল ইসলাম সবুজ, বরিশাল
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১১:০৮ এএম
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:০২ পিএম
চরজাগুয়ার শেষে মরা কুমারখালী নদীর চর পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। সড়কের শেষ মাথায় থাকা লোহার সেতুটি সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে অচল হয়ে পড়ে আছে। প্রবা ফটো
জাগুয়া, চরজাগুয়া ও হরিণাফুলিয়া গ্রাম নিয়ে গঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ড। এর মধ্যে চরজাগুয়াকে বিবেচনা করা হয় বরিশালের ‘ছিটমহল’ হিসেবে।
মূল নগরী থেকে বিছিন্ন এই জনপদের তিন পাশ ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার তিমিরকাঠি ও জাগুয়া গ্রামবেষ্টিত। উত্তরে কীর্তনখোলা, সুগন্ধা আর মরা কুমারখালী নদী। এখানকার প্রায় ১ হাজার ২০০ বাসিন্দার বেশিরভাগই কৃষক ও মৎস্যজীবী।
বছরের পর বছর ধরে সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স, সড়কবাতি বিল নিয়মিত পরিশোধ করছেন বাসিন্দারা। তবে গত ২৩ বছরে এই জনপদে উন্নয়নের তেমন ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি স্থানীয়দের বেশিরভাগেরই এলাকার কাউন্সিলর, মেয়র কিংবা সংসদ সদস্যের নাম জানা নেই।
কাগজে-কলমে চরজাগুয়া গ্রামটি সিটি করপোরেশনের অংশ হলেও মূল শহরের সঙ্গে এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না। সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র হওয়ার পর লোকজনের দুর্ভোগ বিবেচনায় একটি ট্রলারের ব্যবস্থা করেন।
কথা ছিল স্থানীয়দের প্রয়োজন অনুযায়ী এটি চলাচল করবে। এজন্য প্রয়োজনীয় তেল আর মাসে ৯ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয় সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে। বিনা পয়সায় নদী পারাপারের জন্য ট্রলারটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কর্মচারী মো. সেলিম মোল্লাকে। অভিযোগ রয়েছে, নিজের ইচ্ছামতো তিনি সেটি পরিচালনা করেন।
প্রথম দিকে দিনে দুবার চলাচল করলে বছরখানেক ধরে ট্রলারটি সপ্তাহে দুই দিন চলাচল করে। যতই জরুরি প্রয়োজন থাকুক, সপ্তাহে দুই দিনের বেশি যাত্রী পরিবহনে রাজি নন তিনি। এ নিয়ে প্রতিবাদ করা হলে উল্টো হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়।
ট্রলারচালক মো. সেলিম মোল্লা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়, সে অনুযায়ী ট্রলার চালাই। আগে প্রতিদিন চালানোর জন্য বলা হয়েছিল। এখন সপ্তাহে দুই দিন চালাতে বলা হয়েছে। সেভাবেই চালাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব আলী হাওলাদার বলেন, নলছিটি তিমিরকাঠি বাজার থেকে শুরু করে চরজাগুয়ায়ার শেষে মরা কুমারখালী নদীর চর পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। সড়কের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত পুরো রাস্তা ভাঙাচোরা। সড়কের শেষ মাথায় রয়েছে ভাঙাচোরা একটি লোহারপুল। ২০০৭ সালে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে অচল হয়ে পড়ে আছে এটি। সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত লোহার ভিমগুলো রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে।
জাগুয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ইমন হোসেন বলেন, ‘একসময় লোহার এ পুলটি পেরিয়ে নদীর তীরে এসে নৌকাযোগে শহরে যেতাম। এখন সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ২০১১ সালের দিকে শওকত হোসেন হিরন মেয়র থাকাকালে তিনি এলাকার প্রধান সড়কটি সংস্কার করে পিচ ঢালাই করেছিলেন। বর্তমান মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর একবার এখানে এসেছিলেন। তখন বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনের কাজ বন্ধ ছিল। বিষয়টি জানানো হলে তার নির্দেশে দ্রুত পল্লী বিদুৎ সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হয়। তবে সড়ক উন্নয়নের কথা থাকলেও সেটি আর হয়নি।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হলেও বিচ্ছিন্ন এই জনপদের মানুষের সঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর, মেয়র কিংবা সংসদ সদস্যের কোনো যোগাযোগ নেই।
বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘কাগজে-কলমে সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা হলেও চরজাগুয়ার মানুষ কোনো ধরনের নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না। নেই বিদ্যুৎ সুবিধাও। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য নেই কোনো পাইপলাইন। স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নেই। বরং নদীর চরে বসবাসকারীরাও এর চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পায়।’ অথচ এখানকার বাসিন্দাদের হোল্ডিং ট্যাক্সের সঙ্গে নিয়মিত সড়ক বাতির বিলও পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির বলেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য সড়ক সংস্কার, সড়কবাতির ব্যবস্থা, সুপেয় পানির লাইন স্থাপন প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো কেন বাস্তবায়ন হয়নি, সেটি মেয়র ও করপোরেশনের কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।
বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।