ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ১১:০৬ এএম
ফাইল ফটো
ফেনীতে এক হাজারের বেশি অটিজম বা অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের নিয়ে পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। জেলায় সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় নেই প্রশিক্ষিত শিক্ষক।
শুধু তাই নয়, অটিজম শিশুদের জন্য প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু থাকলেও তারা নির্ধারিত সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। এতে করে যযাযথ চিকিৎসা কিংবা অটিজম কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফেনী জেলায় ২৬ হাজার ২৩৩ জন নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী রয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৫১ জন অটিস্টিক। তাদেরকে সরকার নির্ধারিত মাসিক হারে ৮৫০ টাকা ভাতা প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিকৃত ৪৭৮ জনকে মাসিক ৭৫০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত উপবৃত্তি দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন করতে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। প্রতিবছর সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলায় ২৩ জনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
১৯৮৭ সালে শহরের মিজান রোডে ফেনী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পরের বছর থেকেই শুরু হয় শ্রেণি কার্যক্রম। বর্তমানে এখানে ৯৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের জন্য ৪ জন প্রশিক্ষিত ও ১ জন সাধারণ শিক্ষক রয়েছেন। অটিজম কিংবা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিএসএড (ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন) ডিগ্রিধারী হতে হয়।
প্রধান শিক্ষক জাকারিয়া ফারুক জানান, বিদ্যালয়টি পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ১০ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। এ ছাড়া সংকট রয়েছে আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় উপকরণেরও।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সামাজিক সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং আচরণের ভিন্নতাই সমস্যার প্রধান বিষয়। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিকভাবে তাদের প্রতি যত্নবান হওয়া খুবই জরুরি।’
দাগনভূঞা উপজেলার আমুভূঞার হাট এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ-ফরিদা আক্তার দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে দুজনই প্রতিবন্ধী।
ফরিদা আক্তার জানান, তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে শহরের ডাক্তারপাড়ায় বসবাস করেন। ছেলে হুমায়ুন ও মেয়ে আমেনা কেউ জন্মগত প্রতিবন্ধী নয়। ৫ মাস বয়সে খিঁচুনি দেখা দিলে সেখান থেকে আমেনার শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এক বছর বছর বয়সে পড়ে পা ভেঙে যায় হুমায়ুনের। পরবর্তীতে নিউমোনিয়া দেখা দিলে শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। অনেক চিকিৎসা করানোর পরও সুস্থ হয়ে ওঠেনি। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
এদিকে শহরের হাসপাতাল মোড় সংলগ্ন ফেনী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের বিপরীতে গড়ে তোলা হয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী সাহায্য কেন্দ্র। সেখানে অটিজম আক্রান্তদের অকুপেশনাল থেরাপি ও স্পিচ থেরাপি দেওয়ার কথা থাকলেও জনবল সংকটে তা হচ্ছে না।
জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, ২০১৩ সালের ২৪ জুন ফেনীতে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে ১৩ জনের পদে কর্মরত রয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিক্যাল স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি ও ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপির পদও শূন্য। ফলে ট্রেনিংপ্রাপ্ত একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন ৪০-৫০ জন প্রতিবন্ধী ফিজিওথেরাপি নিয়ে থাকেন।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অটিজম কিংবা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজ-অর্ডার শিশু-কিশোর স্নায়বিক বিকাশে সমাজসেবা মন্ত্রণালয় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে অটিজম কিংবা প্রতিবন্ধীরা অনেক উপকৃত হবে।