দখলে দূষণে খালে পরিণত খোয়াই নদ

হবিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা একসময়ের স্রোতস্বিনী খোয়াই নদ এখন খালে পরিণত হয়েছে। দখলে, দূষণে নদটি মৃতপ্রায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীরা খালের সমান নদকেও ছাড় দিচ্ছে না। নদের পাড় দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এ নিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা এখনও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। এতে পুরো নদই দখল হওয়ার পথে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কারণ নদে পানি নামার পথগুলো দখল হয়ে গেছে। পাশাপাশি ময়লা আবর্জনা ফেলে নদের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। দ্রুত নদটি দখলমুক্ত করা না হলে বিপর্যয় নেমে আসবে।

এর আগে পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের আন্দোলনের ফলে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নদের একাংশের দখল উচ্ছেদ করেন জেলা প্রশাসক। বর্তমানে শহরের মাছুলিয়া, মাহমুদাবাদ, অনন্তপুর, শায়েস্তানগর এলাকায় দখল উচ্ছেদ করা নদের পাড় পুনরায় দখল হয়ে গেছে। এ ছাড়া মুসলিম কোয়াটার, সিনেমা হল, ঝিলপাড়, বাগানবাড়ি, হরিপুর এলাকাসহ নদের অনেক জায়গায় ভবন নির্মাণ ও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তুলেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ’জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনসহ আমরা নদ উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছি। উচ্ছেদ কার্যক্রম না করার ব্যর্থতা জেলা প্রশাসনের।’ নদটি দখলদারদের কবল থেকে দ্রুত উদ্ধার করাসহ বর্জ্য ও দূষণ বন্ধে কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, ’উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শনাক্ত বা দৃশ্যমান সব বেআইনি দখলদারদের স্থাপিত অবকাঠামো অপসারণ ও দূষণমুক্ত করে নদের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।’

হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ’নদের কিছু জায়গা থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে ৪৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের চলাচলের পথ নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নদের পাড় ঘেঁষে এ রকম চলাচলের আরও পথ নির্মাণ করা হবে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নদের দখল করা সব জায়গা উদ্ধার করার জন্য। এ কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরের সহযোগিতার জন্যও চেষ্টা করছি।‘

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ’খোয়াই নদের রেকর্ড হাতে পেয়েছি। নদের জায়গা রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হবে।’