শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৪৬ পিএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৪৮ পিএম
কাপাসিয়ায় এ বছর প্রায় ৫০ একর জমিতে ফুটি কার্পাস চাষ হয়েছে। প্রবা ফটো
এক কেজি তুলার দাম ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। ৩৫ শতক জমিতে কমপক্ষে ৬০০ কেজি তুলার ফলন হয়। উৎপাদন খরচ অন্যান্য ফসলের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। এই তুলা ইতিহাসের সেই ফুটি কার্পাস জাতের।
জনশ্রুতি রয়েছে কার্পাস তুলার সূত্র ধরেই গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার নামকরণ হয়। উপজেলায় এ বছর প্রায় ৫০ একর জমিতে ফুটি কার্পাস চাষ হয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুরের তুলা উন্নয়ন গবেষণা ও বীজ বর্ধন খামারের কৃষিবিদদের পরামর্শে ফুটি কার্পাস চাষের এই কার্য চলছে। এর আগে প্রায় অর্ধ যুগের চেষ্টা-সাধনায় সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক ফুটি কার্পাস চাষ ও মসলিন কাপড় উৎপাদন করেছে সরকার। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলার বেলাসী গ্রামের কমর উদ্দিন এ বছর বাণিজ্যিকভাবে ফুটি কার্পাস চাষ করেছেন। কমর উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, তিনি এক একর জমিতে চাষ করে ইতোমধ্যে সাড়ে পাঁচশ কেজি তুলা সংগ্রহ করেছেন। এখনও জমিতে যে পরিমাণ তুলা রয়েছে, তাতে আরও প্রায় দেড়শ কেজি হবে। ফলনে খুশি হয়ে আগামী বছর আরও তিন একর জমিতে এ তুলা চাষ করতে চান।
তুলা চাষে কৃষকদের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে বিক্রি নিয়ে ঝামেলা নেই। তুলা উন্নয়ন বোর্ড পূর্বনির্ধারিত ন্যায্যমূল্য দিয়ে তুলা কিনে নেয়। উপজেলার রায়েদ গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় তুলায় রোগজীবাণুর আক্রমণ কম। প্রতি শতকে ২০ কেজি তুলা হয়েছে এবার। তা ছাড়া ফুটি কার্পাস চাষ করে তিনি কাপাসিয়ার নামকরণের ইতিহাস বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চান।
একই গ্রামের রুমা বেগম ৩৫ শতক জমিতে চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে তার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। রুমা বলেন, প্রায় সাড়ে ৬০০ কেজি তুলা সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। জমি থেকেই প্রতি কেজি তুলা ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি করছেন। অন্য যেকোনো ফসল থেকে ফুটি কার্পাস চাষ লাভজনক বলে তিনি জানান।
ওই এলাকার মাহফিজুল হক তুলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তিনি বলেন, স্ফটিক স্বচ্ছ তুলা ক্ষেতজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। দেখে মনে হয় আকাশের সাদা মেঘ জমিতে নেমে এসেছে। আশপাশের লোকজন তুলাক্ষেত দেখতে আসেন।
তিনি জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ড প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে। সংগ্রহ ও বিপণন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও চাষিদের সম্মিলিত উদ্যোগে ফুটি কার্পাস চাষ সম্ভব হচ্ছে বলে জানান কাপাসিয়ার ইউএনও একেএম গোলাম মোর্শেদ খান। তিনি বলেন, এই তুলা কাপাসিয়ার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম আব্দুল বাতেন বলেন, ঢাকা জোনের ১৪টি ইউনিটের মধ্যে কাপাসিয়ায় আবাদ ভালো হয়েছে। সঠিক সময়ে বীজবপন, সঠিক পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন ভালো হয়েছে।
এ বছর কাপাসিয়ায় হেক্টরপ্রতি গড়ে সাড়ে চার টন তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একে বাম্পার ফলন বলা যায়। শ্রাবণ মাস তুলার বীজ বপনের সময়। এ সময় যতটুকু বৃষ্টি হয়, তাতেই কাজ হয়ে যায়। আলাদা সেচের প্রয়োজন তেমন একটা হয় না।
তুলার সাথি ফসল হিসেবে লালশাকসহ সব ধরনের সবজি চাষ করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম মাস থেকেই সাথি ফসল থেকে বাড়তি আয় হয়। সাথি ফসল বিক্রি করে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে তুলা চাষের খরচ উঠে আসে। তুলনামূলক কম উর্বর উঁচু জমি এবং লেবু, কলা, আম ও কাঁঠালের বাগানে সফলভাবে ফুটি কার্পাস চাষ করা যায়। ফলে খাদ্যশস্য চাষের জমির ওপর প্রভাব পড়ে না।
সব ঠিক থাকলে এ বছর তুলা চাষের অধিক সাফল্য কাজে লাগিয়ে আগামী বছর ঢাকা জোনের সব ইউনিটে ফুটি কার্পাস চাষ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।