ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩ ১৪:৫৯ পিএম
আমেনা খাতুন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় গ্রামে হামলা চালায় পাকিস্তানি হায়েনারা। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার পশ্চিম শালকোনা গ্রামের আমেনা খাতুনের কোলে তখন মাত্র ১৬ দিন বয়সের শিশু। শ্রাবণ মাসের কোনো এক দিন সকালে পুকুরঘাটে হাঁড়ি-পাতিল ধোয়ার কাজ করছিলেন তিনি। এমন সময় দেখেন পাকিস্তানি বাহিনী বাড়িতে প্রবেশ করছে। তখন তিনি দৌড়ে অন্য একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। ওই বাড়ির ঘরের কোণে অন্য নারীদের সঙ্গে আমেনাকেও ধরে আনা হয় উঠানে। প্রকাশ্যে চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
একাত্তরের নির্মম নির্যাতনের শিকার আমেনা খাতুন আজও বেঁচে আছেন। তবে স্বাধীনতার এই ৫০ বছর পরও রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি বা সম্মান মেলেনি তার। বীরাঙ্গনাদের এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অশীতিপর আমেনা আজও বীরাঙ্গনার স্বীকৃতিই পাননি। জীবনের শেষ বেলায় এসে স্বীকৃতি চান তিনি।
আমেনা বেগম জানান, পাকবাহিনীর সেদিনের নির্যাতনের পর বাড়ি এসে সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি। কিছুদিন পর মারা যায় ওই সন্তান। দেশ স্বাধীনের পর অভাবের তাড়নায় অনেকটা না খেয়ে মারা যায় চার বছর বয়সি আরেক সন্তান। এরপর মারা যায় স্বামীসহ আরও দুই সন্তান। অর্জিত হয় দেশের স্বাধীনতা। সম্ভ্রম হারানো আমেন খাতুন অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। উপার্জিত অর্থ খরচ করে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ঘুরেও বেড়ান। কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আর মেলেনি তার। এখন দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন তিনি। নেই কোনো সন্তান এবং জমিজমা। থাকেন টিনের জরাজীর্ণ একটি ছোট ঘরে। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। মেয়ের ঘরের একমাত্র নাতিই তার বেঁচে থাকার ভরসা।
ধোবাউড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘বীরাঙ্গনা আমেনা খাতুন ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর হাতে পৈচাশিক নির্যাতনের শিকার হন। সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু আমেনা খাতুন কেন বীরঙ্গনার স্বীকৃতি পাননি তা জানা নেই।’
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, ‘নতুন যোগদান করেছি, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’