চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১৫:৩০ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১৫:৪৮ পিএম
দিয়াজ ইরফান চৌধুরী। সংগৃহীত ছবি
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলা অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে মামলার বাদী ও নিহত দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরীর নারাজি আবেদন মঞ্জুর করে আদালত ফের তদন্তের আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম তানভীর আওলাদ জুনায়েদ এ আদেশ দিয়েছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি সিআইডি মামলার সব আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল আদালতে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ ইফতেখার সাইমুম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মামলাটি সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা দ্বারা পুনঃতদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।’
নিহত দিয়াজ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজের বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
এই ঘটনায় দিয়াজের মা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপুসহ তার সহযোগীদের আসামি করা হয়েছিল। মামলাটি প্রায় ছয় বছর তদন্ত করে সিআইডি। তদন্ত শেষে একটি আত্মহত্যার ঘটনা উল্লেখ করে সিআইডি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর আদালতে নারাজি আবেদন দেন বাদী। আর নারাজি আবেদনের ওপর শুনানির পর আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দিল।
নারাজি আবেদনের বিষয়ে বাদী জানান, চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তাকে কিছু জানানো হয়নি। আসামি আলমগীর টিপুর ফেসবুক স্ট্যাস্টাস দেখে তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের তথ্য জানতে পারেন। আসামি কর্তৃক সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ‘প্রভাবিত’ হয়েছেন বলে মনে করছেন তিনি।
দিয়াজের মৃত্যুর তিন দিন পর ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর ময়নাতদন্ত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা এটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেন। এরপর হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ। সেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে ২৪ নভেম্বর বাদী আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎকরা। দ্বিতীয় প্রতিবেদনে দিয়াজের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার তথ্য উল্লেখ করা হয়। এরপর দিয়াজের মায়ের করা মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয় আদালত।
সেই হত্যা মামলার আসামিরা হলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আলমগীর টিপু, সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমান।
আসামিদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ আরমান জামিনে আছেন। বৃহস্পতিবার তারা আদালতে হাজির থেকে জামিন আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। এই মামলার আসামি এবং নিহত দিয়াজ উভয় পক্ষই ছিল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।
ঘটনার শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের জেরে দিয়াজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীরা দাবি করে আসছে।