সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১২:১৯ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১২:২০ পিএম
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার প্রান্তসীমার নীলগঞ্জ পুরাতন বাজারসংলগ্ন মাঠে জমে ওঠে পুরোনো সাইকেলের হাট। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নীলগঞ্জ পুরাতন বাজারসংলগ্ন মাঠ। দীর্ঘদিন ধরে প্রতি শনি ও বুধবার এখানে বসে আসছে পুরোনো সাইকেলের হাট। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত বিক্রেতা তাদের ব্যবহৃত পুরোনো সাইকেল বিক্রির জন্য এ হাটে সমবেত হন।
সাইকেলের পাশাপাশি পুরোনো রিকশা ও ভ্যানগাড়িও বিক্রি হয়। হাটবারে শত শত সাইকেল ও ক্রেতা-বিক্রেতার সমারোহে জমে ওঠে এই হাট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিক্রেতাদের বেশিরভাগই সাইকেল ও রিকশার মেকানিক। স্কুল-কলেজপড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীও তাদের ব্যবহৃত পুরোনো সাইকেল হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে। মেকানিকরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে পুরোনো ও অকেজো সাইকেল কিনে নিজেদের ওয়ার্কশপে মেরামাত ও রঙ করে এই হাটে এনে বিক্রি করেন। এটিই এখন তাদের জীবন-জীবিকার প্রধান পেশা। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা নতুন সাইকেল বা মোটরসাইকেল কেনার জন্য তাদের পুরোনো সাইকেল বিক্রি করে দেন।
নীলগঞ্জ পুরাতন বাজারে এই হাটটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে জানিয়ে স্থানীয় বাজারিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও হাটের ইজারাদার মো. ফুল মিয়া বলেন, এই বছর তিনি ৭০ হাজার টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছেন। প্রতি হাটে এখানে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার সাইকেল বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, এই হাটে হাওরাঞ্চলের ইটনা, মিঠামইন উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী কেন্দুয়া, নান্দাইল ও অন্যান্য উপজেলার ক্রেতারা এসে থাকেন।
সাইকেল বিক্রেতা বাজারিপাড়া গ্রামের মো. সাহাবউদ্দিন, আবদুল বারিক ও পটুয়াকান্দি গ্রামের চাঁন মিয়া জানান, তারা বেপারিদের কাছে থেকে পুরোনো সাইকেল কিনে এনে এই হাটে বিক্রি করেন। এটাই তাদের একমাত্র পেশা। প্রতি হাটে প্রতিজন ব্যবসায়ী গড়ে তিন থেকে চারটি সাইকেল বিক্রি করতে পারেন। তারা বলেন, শুধু এই হাট নয়, করিমগঞ্জ উপজেলার আনন্দ বাজারেও এ রকম একটি সাইকেলের হাট রয়েছে। ওই দুই সাইকেলের হাটে পুরোনো সাইকেলকেন্দ্রিক শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন।
এসব সাইকেল কারা কেনেন- এ প্রশ্নের জবাবে বেপারিরা জানান, সাধারণত দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েরা পুরাতন সাইকেল কিনে থাকেন। অনেক সময় হঠাৎ অর্থের প্রয়োজন পড়ায় পুরোনো সাইকেল ছাড়াও অনেকে সদ্য কেনা সাইকেল দ্রুত বিক্রির জন্য এই হাটে নিয়ে আসেন।
হাট থেকে স্কুলপড়ুয়া ছেলের জন্য সাইকেল কিনতে এসেছেন নেত্রকোণার নান্দাইল উপজেলার কাটাখালি গ্রামের কৃষক বজলু মিয়া।
তিনি বলেন, আমার ছেলে মোহাম্মদ আরমান নান্দাইল উপজেলার কাশিনগর উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। বাড়ি থেকে স্কুল অনেকদূরে হওয়ায় অনেক দিন ধরে ছেলেটি সাইকেল কিনে দেওয়ার বায়না করে আসছিল। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ১০-১২ হাজার টাকা দিয়ে সাইকেল কেনা সম্ভব না। তাই ছেলে ও ছেলের মাকে নিয়ে এই হাটে এসেছি। ছেলের পছন্দমতো সাড়ে ৫ হাজার টাকায় একটি সাইকেল কিনে দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।
মাইজখাপন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারু মিয়া জানান, পুরাতন এই সাইকেলের হাটটি অনেক দিন ধরে চলে আসছে। এই হাটে সাইকেল বিক্রি করে অনেকেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই হাট থেকে সরকারও রাজস্ব পাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিক বলেন, গ্রামের কিছু মানুষ এই হাটকে কেন্দ্র করে আয়-রোজগারের সুযোগ পাচ্ছেন। এটি একদিক থেকে একটি ইতিবাচক বিষয়। এ রকম অভিনব ও জমজমাট হাটের ব্যবস্থা দেখে আমি খুবই উৎসাহবোধ করছি। বাজারটি আরও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।