× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

১৫ অক্সিজেন প্ল্যান্টের ১৩টিই ঝুঁকিপূর্ণ

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৯ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশের চাহিদার অর্ধেকের বেশি অক্সিজেন জোগান দেয় লিন্ডে বাংলাদেশ। নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে তাদের মূলমন্ত্র হলো- ‘কর্মচারী, গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের জন্য স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশের সর্বোত্তম অবস্থা নিশ্চিত করা’। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানটির সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকার অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। ওই এলাকায় গড়ে ওঠা প্রথম প্ল্যান্ট হলেও প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিনেও ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন করেনি।

শুধু লিন্ডে বাংলাদেশ নয়, সীতাকুণ্ডে গড়ে ওঠা ১৫টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিদর্শনের পর ১৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। গত ৪ মার্চ সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে হতাহতের পর ফায়ার সার্ভিস সীতাকুণ্ডে এই পরিদর্শন কার্যক্রম চালায়। ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শনে লিন্ডে বাংলাদেশ ছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ প্ল্যান্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লিমিটেড অক্সিজেন প্ল্যান্টও। দেশের স্বনামধন্য এই শিল্প গ্রুপটিও তাদের অক্সিজেন প্ল্যান্টে ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন করেনি।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এমডি আব্দুল মালেক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের পর আমরা সীতাকুণ্ডে গড়ে ওঠা ১৫টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেছি। এর মধ্যে প্রায় সবগুলো প্ল্যান্টই অগ্নিঝুঁকি। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যাদের ফায়ার সেফটি প্ল্যান আছে, তাদের দ্রুত সেটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছি। আর যাদের নেই, তারা যেন দ্রুত সেফটি প্ল্যান অনুমোদন নেয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলোকে নির্ধারিত কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। এখন যত দ্রুত সম্ভব ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছি। আমরা কিছুদিন দেখব, ঈদের পর তাদের আবার চিঠি দেওয়া হবে। এর মধ্যে তারা যদি ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন না করে, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে শাস্তি অথবা জরিমানার ব্যবস্থা করব।’ 

গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার কেশবপুরে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সাতজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আরও অন্তত ২৫ জন আহত হন। পরে ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ওই প্ল্যান্টে ফায়ার সেফটি প্ল্যান না থাকার বিষয়টি উঠে আসে। পরে এ ঘটনায় সীতাকুণ্ড এলাকায় গড়ে ওঠা অপরাপর অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিদর্শনে যায় ফায়ার সার্ভিস।

পরিদর্শনে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস সীতাকুণ্ডে ১৫টি অক্সিজেন কারখানার সন্ধান পায়। এর মধ্যে ১৩টি প্ল্যান্টই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন টিমের সদস্যরা জানিয়েছেন, এসব অক্সিজেন প্ল্যান্টের অধিকাংশে ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই। নিজস্ব কোনো পানির উৎস নেই। পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ অক্সিজেন লিমিটেড ও বিএসআরএম অক্সিজেন রিজার্ভার ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় না থাকলেও শতভাগ নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন টিম। ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটিতে বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ১৩টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট হলো- সীতাকুণ্ডের কেশবপুর এলাকার লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রাদার্স অক্সিজেন লিমিটেড, অক্সিকো লিমিটেড, ভাটিয়ারী এলাকার কবির অক্সিজেন লিমিটেড, শীতলপুর এলাকার আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লিমিটেড, বড় কুমিরা এলাকার কেআর অক্সিজেন লিমিটেড, গোল্ডেন অক্সিজেন লিমিটেড, মাদামবিবির হাট এলাকার অ্যাসোসিয়েড অক্সিজেন লিমিটেড, দক্ষিণ সোনাইছড়ি এলাকার সুবেদার অক্সিজেন, মধ্যম সোনাইছড়ি এলাকার মাস্টার স্টিল অ্যান্ড অক্সিজেন লিমিটেড, মানতি স্টিল অ্যান্ড অক্সিজেন লিমিটেড, শীতলপুর এলাকার শীতলপুর অক্সিজেন এবং চৌধুরীঘাটার রিগ্যাল অক্সিজেন লিমিটেড। এর মধ্যে কেআর অক্সিজেন, সুবেদার অক্সিজেন এবং মাস্টার স্টিল অ্যান্ড অক্সিজেন লিমিটেড ফায়ার সেফটি প্ল্যান অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু এখনও তারা বাস্তবায়ন শুরু করেনি। অপর ১০টি প্রতিষ্ঠানের কারও ফায়ার সেফটি প্ল্যান নেই।

ফায়ার সেফটি প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে লিন্ডে বাংলাদেশের হেড অব সেফটি হেলথ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি প্রকৌশলী মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেশের আইনি প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব প্রসেস সেফটি এবং ব্যক্তিগত সেফটি ব্যবস্থাপনাও রয়েছে। আমাদের ফায়ার লাইসেন্স আপডেট করা আছে এবং অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনার অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। আমরা এই প্রক্রিয়াটি গত বছর থেকে একটি অনুমোদিত পরিষেবা প্রদানকারীর সঙ্গে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে সেটি জমা দিয়েছি।’

এদিকে আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লিমিটেড প্ল্যান্টের বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আবুল খায়ের গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ম্যানেজার (অ্যাড অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ) খোরশেদ আলম ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রধান কার্যালয়ে কাজ করি। অক্সিজেন প্ল্যান্ট সম্পর্কে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’ অক্সিজেন প্ল্যাটে দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নাম ও মোবাইল নম্বর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই কারখানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নাম ও মোবাইল নম্বর আমার কাছে নেই।’

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যেসব কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোকে দ্রুত কমপ্লায়েন্সের মধ্যে চলে আসার জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা কারখানায় শ্রমিক নিহত হোক সেটি যেমন চাই না, তেমনি কারখানা মালিকও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তা-ও চাই না। আমরা তাদের সময় দেব। এর মধ্যে তারা যদি কমপ্লায়েন্সের মধ্যে না আসে, আমরা অভিযান চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা