× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সেই বিচারক মেয়ের সহপাঠীদের বিরুদ্ধে তুলেছেন র‌্যাগিং ও বুলিংয়ের অভিযোগ

বগুড়া অফিস

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩ ০১:১১ এএম

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৩ ০১:১২ এএম

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর মাকে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় নিজের অবস্থান তুলে ধরে বিবৃতি দিয়েছেন জেলার সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন। গত মঙ্গলবারের ওই ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারের দুদিনের মাথায় তাকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। এরপর গতকাল তিনি বিবৃতির মাধ্যমে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ৩ পৃষ্ঠার লিখিত বিবৃতিতে বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন দাবি করেছেন তিনি কাউকে পা ধরতে বাধ্য করেননি। উল্টো তিনি তার মেয়ের দুই সহপাঠীর বিরুদ্ধে র‌্যাগিং ও বুলিংয়ের অভিযোগ তুলেছেন। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বিবৃতি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে যে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তিনি তার মেয়েকে র‌্যাগিং ও বুলিংয়ের অভিযোগ করেছেন তাদের একজন তা অস্বীকার করেছেন।

দীর্ঘ বিবৃতিতে রুবাইয়া ইয়াসমিন বলেন, আমার মেয়েকে জানুয়ারি মাসে ভিএম স্কুলে (বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) ভর্তি করি। সে অত্যন্ত মেধাবী ও শান্ত প্রকৃতির ছিল বলে ওই স্কুলের স্থানীয় শিক্ষার্থী ও তার কয়েকজন বান্ধবীর সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্রুপ তাকে সব সময় নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে র‌্যাগিং ও বুলিং করে আসছিল।

তিনি আরও বলেন, তারা তাকে বলতো জজের মেয়ে ভাব ধরে চুপ করে থাকে। তাদের মধ্যকার সংঘর্ষ প্রশমিত করতে ২০ ফেব্রুয়ারি আমার মেয়ের জন্মদিনে একটি কেক কিনে পাঠাই। আমার মেয়ে ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেক কাটে।

তা ছাড়া ২০ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ক্লাসের আরও দুজন ছাত্রীর জন্মদিন ছিল বলে তাদেরকে ডেকে এনে তার কেকটি শেয়ার করে। কিন্তু মরিয়ম মাহি ও তার গ্রুপের মেয়েরা আমার মেয়ের সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলার বিষয়টি মেনে নিতে পারছিল না। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ মার্চ তাদের ক্লাস রুমের দরজা লাগিয়ে বলা হয়, ৫৩ থেকে ৫৭ রোল ক্লাস রুম ঝাড়ু দেবে। আমার মেয়ের ক্লাসের বান্ধবী যার রোল ৭ (মানসুরা) তাকে সহযোগিতা করার জন্য চেষ্টা করলে ওই গ্রুপের মেয়েরা তাকে সহযোগিতা করতে নিষেধ করে।

ক্লাস ঝাড়ু দেওয়ার জন্য যে ঝাড়ুটি ব্যবহার করা হয় তা ফুলের ঝাড়ু নয়। সুইপারদের জন্য তৈরি করা একটি বিশেষ ধরনের ঝাড়ু, যা অত্যন্ত ভারী। তাছাড়া বিশাল ক্লাস রুমের প্রতিটি বেঞ্চ তুলে তুলে বিশাল বড় ক্লাস রুমটি তাকে ঝাড়ু দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।  

আমার মেয়ে তাদের ভয়ে ক্লাসের পেছনে অত্যন্ত ময়লা জায়গাটি ঝাড়ু দিতে গেলে মরিয়ম মাহি ও তার গ্রুপের ১২জন মেয়েসহ কয়েকজন (জয় বাংলা, জজের মেয়ে রুম ঝাড়ু দিচ্ছে, জজ সরকারের কমলা) স্লোগান দিতে থাকে।

এই পরিস্থিতিতে আমার মেয়ে ঝাড়ু রেখে ক্লাসের সামনের বেঞ্চে চুপ করে বসে থাকে। তখন মরিয়ম মাহি তার গ্রুপের ১২জন সদস্য নিয়ে তাকে ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে মরিয়ম মাহি ক্লাস রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। ওরা সবাই মিলে র‌্যাগিং ও বুলিং করতে থাকে এই বলে যে, ‘জজের মেয়ে বলে রুম ঝাড়ু দেয় না, জজের মেয়ে ভাব ধরে ঘর ঝাড়ু দেয় না, জজ সরকারের কামলা’।

তখন আমার মেয়ে মরিয়ম মাহির কাছে জানতে চায় আমার মা সরকারের কামলা হলে তোমার আব্বু কী করে? তখন মরিয়ম মাহি তাকে বলে তার বাবা ব্যবসায়ী। মরিয়ম মাহি ও তার গ্রুপের মেয়েরা মিলে আমার মেয়েকে কোন কথা বলতে দিচ্ছিল না। আমার মেয়ে বলতে থাকে আমার ডাস্ট এলার্জি আছে। এই বলতে বলতে আমার মেয়ের নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে এবং সে
কান্না করতে থাকে।

আমার মেয়ে তখন ক্লাসের দরজা খোলা পেয়ে ক্লাস শিক্ষকের কাছে ছুটে যায়। তখন আমার ফোন শ্রেণির স্কুল শিক্ষক মুসলিমা ম্যাডাম কল দিলে আমি এজলাসে থাকার কারণে অফিস সহায়ক শহিদুল ইসলাম ফোন রিসিভ করেন। তিনি ফোন রিসিভ করে আমার কাছে এসে বলেন, ম্যাডাম আপনার মেয়ের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে এবং কান্না করছে তাকে যেন নিয়ে আসি। আমি তখনই এজলাস মুলতবি করে চেম্বারে আসি এবং আমার সহায়ক শহিদুল ইসলামকে ড্রাইভার রায়হানসহ পাঠাই মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার জন্য। তখন শহিদুল ইসলাম স্কুলের টিচারদের রুম থেকে মেয়েকে অফিসে নিয়ে আসে। আমি তার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যাই এবং তাকে জিজ্ঞাসা করি, তার সঙ্গে কী হয়েছে। সে তখন ভীত অবস্থায় বলতে থাকে, মা আমি আর এই স্কুলে ক্লাস করতে পারব না। মরিয়ম মাহি ও তার গ্রুপের ১২জন মেয়ে শুধু আমাকে জজের মেয়ে সরকারের চাকরের মেয়ে বলে র‌্যাগিং ও বুলিং করে এবং নিয়মিত মানসিক নির্যাতন করে। তার পর আমি আমার মেয়েকে নিয়ে বাসায় চলে আসি ও তার হাত মুখে ধুয়ে ওষুধ খাওয়াই এবং শুয়ে থাকতে বলি। সেইদিন বিচারপতি স্যারের কোর্ট ভিজিট থাকায় আমি আমার মেয়েকে বাসায় একা রেখে ফের অফিসে চলে আসি।

মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় আমার মেয়ে ফেইসবুকের স্টোরিতে একটি পোস্ট দেয়। পোস্টটি আমি দেখার সঙ্গে সঙ্গে ডিলিট করে দেই। মরিয়ম মাহি, মেঘা ও আফ্রিদা পোস্টের স্ক্রিন শর্ট নিয়ে তাদের ফেইসবুক স্টেরিতে আমাকে ও মেয়েকে নিয়ে অশালীন ভাষায় মন্তব্য করতে থাকে। তা ছাড়া স্ক্রিন শর্টগুলো ভিএম স্কুল ও জেলা স্কুলের (বালকদের স্কুল) জয়েন্ট গ্রুপে ছেড়ে দেয় এবং বিভিন্ন ছেলেদের ট্যাগ করতে থাকে। বিষয়টি আমার মেয়ে জানালে আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে টেক্সটের মাধ্যমে জানাই যেন, তারা অনলাইন থেকে পোস্টগুলো রিমুভ করে দেয়। পরে ওসি অপারেশন মুন্নাফ ও সদস্য যোগদান করা এডিশনাল এসপির সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়।

আমরা মরিয়ম মাহি, মেঘা ও আফ্রিদার অভিভাবককে ফোন করে বিষয়টি জানাই। কিন্তু পরদিন সকালেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মরিয়ম মাহি লেখে ‘আমাদের মা তো আমাদেরকে নৈতিক শিক্ষা দিছে। যেটা আপনার মা দিতে ব্যর্থ। আগে আপনি আপনার মাকে আমাদের মায়ের মতো হইতে বলেন। হায়রে জাজ যার কোন ম্যানার্স নাই। কোনো ভদ্রতা মেয়েকে শিখাতে পারে নাই। তিনি নাকি জাজ। ভাই তুই আগে ম্যানার্স শিখ। নিজে বস্তি হয়ে আমাদের বলতে আসিস। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে আবার বড় বড় কথা।’

মেঘা তার স্টোরিতে মন্তব্য করে ‘তুইতো ম্যানার্সই জানস না। কিসের জজের মেয়ে তুই। আগে তোর মায়ের কাছ থেকে জেনে আয় ম্যানার কাকে কয়। আচ্ছা জজের বেটি অবশ্য তোর মা-ই তো কিছু জানে না। তোকে কী শিখাবে। যার কোন ম্যানার নাই তাকে বলে জাজ।’

স্ক্রিন শর্টগুলো আমি ডেপুটি কমিশনার বগুড়া ও এডিশনাল এসপিকে হোয়াটস্ অ্যাপে পাঠিয়ে আমি এগুলো অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য অনুরোধ করি। আমি বিষয়টি ফোন দিয়ে বিজ্ঞ সিজেএম স্যারকেও জানাই। ঠিক ওই মুহূর্তে ওসি অপারেশন মুন্নাফ আমার চেম্বারে আসে। ঠিক তখনই শ্রেণি শিক্ষক মুসলিমা ও পরে প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন আমাকে তার অফিসে আসতে বলেন।

আমি আমার সন্তানের শিক্ষা জীবনের কথা চিন্তা করে সেখানে যেতে রাজি হই। আমার সঙ্গে ওসি মুন্নাফও প্রধান শিক্ষকের অফিসে যান। আমি বিজ্ঞ অভিভাবক বকুলকে সেখানে বসে থাকতে দেখি। উনি বলেন যে, ওনাদের ডেকে আনা হয়েছে। তখন আমি, বিজ্ঞ আইনজীবী বকুল ও ওসি মুন্নাফ মেয়েদের তাদের গ্রুপ থেকে এবং ছেলেদের গ্রুপ থেকে স্ক্রিন শর্টগুলো সরানোর জন্য অনুরোধি করি। সেই সঙ্গে আজে বাজে মন্তব্য করতে মানা করি। কিন্তু তারা আমাদের কারও কথাতেই সায় দিচ্ছিল না। তখন আমি প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ করে চলে আসার চেষ্টা করি। তখন মরিয়ম মাহির মা আমাকে জড়িয়ে ধরে ফেলে এবং উনি বলেন যে, তার মেয়ে তার অবাধ্য। তার কথা শোনে না। তখন আমি তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলি যে, আমি তার কষ্ট বুঝতে পারছি। ঠিক তখনই শ্রেণি শিক্ষক মুসলিমা ও হাসি বেগম ওই অভিভাবককে আমার পা ধরার জন্য ইশারা-ইঙ্গিত ও মৌখিক নির্দেশ দিয়ে হাসাহাসি করতে থাকে।
তখন আমি, অভিভাবক বকুল ও ওসি মুন্নাফ তাকে নিবৃত করে সেখান থেকে বের হয়ে আসি। আমি কাউকে পা ধরার নির্দেশ দেইনি বা পা ধরতে বাধ্যও করিনি। এটি একটি অন্যায়, অবিবেচক ও গর্হিত অভিযোগ।

আমার মেয়ে দীর্ঘ ৪ মাস ধরে মাহি ও আফ্রিদা নাম দুজন মেয়ের গ্রুপের সদস্যদের র‌্যাগিং ও বুলিংয়ের শিকার। সে দীর্ঘদিন ধরে এই স্থানীয় ছাত্রীদের অত্যাচার সহ্য করে আসছিল এবং তাদের সঙ্গে মিলে মিশে থাকার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তারা সব সময় আমার মেয়েকে জজের মেয়ে, সে বেশি সুযোগ সুবিধা পায়, জজ আসলে সরকারের চাকর, জজ জনগণের কামলা এসব বলে র‌্যাগিং ও বুলিং করে আসছে।

সত্য যে আমি পাবলিক সার্ভেন্ট এবং জনগণের সেবায় নিয়োজিত। কিন্তু একটি শিশুকে যার বয়স ১৩ বছর এক মাস, তাকে তার মা জনগণের চাকর, জজ জনগণের কামলা, জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে র‌্যাগিং ও বুলিং করা একটি অন্যায় আচরণ। ছাত্রীরা তাদের এমন আচরণ যেন সংবাদমাধ্যমে চলে না আসে সেজন্য আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিচার বিভাগকে নিয়ে অপমানসূচক কথাবার্তা প্রচার করে জনমনে অসন্তোষ তৈরি করছে।

বিবৃতির শেষে তিনি বলেন, ‘আমি এতদিন আমার ও আমার শিশুকন্যার প্রাইভেসির কথা চিন্তা করে মিডিয়া থেকে দূরে ছিলাম এবং কোন বিবৃতি দেইনি। কিন্তু একটি মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে চলা আমার জন্য কষ্টকর। তাই আমি সত্য বিষয়টি তুলে ধরলাম।’

বগুড়ার সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম মাহী বলে, ‘জাজ ম্যাম আমার এবং আমার অপর সহপাঠী আফ্রিদার বিরুদ্ধে তার মেয়েকে র‌্যাগিং ও বুলিংয়ের যে অভিযোগ এনেছেন তা সঠিক নয়। কারণ তার মেয়ে দুই মাস আগে ভর্তি হয়েছে। যদি আমরা সত্যিই র‌্যাগিং ও বুলিং করতাম তাহলে দুই মাস আগে থেকেই করতাম আর তখনই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতো।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা