ডাবলুর বহিষ্কার চাইলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বহিষ্কারের দাবি করে নগরীতে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। সোমবার (২৭ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে নগরীর লক্ষীপুর মোড়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘ডাবলু সরকারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ আলোচনার কথা ছিল। তবে হঠাৎ করেই সেই সভা স্থগিত করে দেওয়া হয়। তারা সভা করল না। ফলে এ নিয়ে দলীয় সভায় আলোচনার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ডাবলু সরকারের উচিত ছিল এ বিষয়ে দলের কাছে ব্যাখ্যা দেওয়া। তদন্তের স্বার্থে তার সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে যুগ্ম সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া। তার উচিত ছিল বিষয়টির সমাধান করে দলকে দায়মুক্ত করা। এখন তৃণমূল আওয়ামী লীগের চাপে আমরা মানববন্ধন করতে বাধ্য হচ্ছি। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক।’ 

আবু রায়হান মাসুদ বলেন, ‘অনেক হিন্দু পরিবারকে বিতাড়িত করেছেন ডাবলু সরকারের পরিবার। ওনার বাবা রাজাকার আব্দুর রশিদ। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ ও লুণ্ঠনের অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ মামলার চার নম্বর আসামি ছিলেন রশিদ সরকার। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পায় প্রসিকিউশন টিম।’

তিনি বলেন, ‘তবে ছয়জনের মধ্যে মনো, মজিবর রহমান, আব্দুর রশিদ সরকার, মুসা ও আবুল হোসেন আগেই মারা গেছেন। আজ যদি আব্দুর রশিদ রাজাকার বেঁচে থাকতেন, তবে তার ফাঁসি হতো। ডাবলু সরকার একজন রাজাকার সন্তান। মহানগর আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলন চলবে, প্রয়োজনে পার্টি অফিস ঘেরাও করা হবে।’

যুগ্ম সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম দল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ডাবলু সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তাকে বহিষ্কার করা হোক।’

রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ বলেন, ‘ডাবলু সরকারের উচিত ছিল দায় ঘাড়ে নিয়ে পদত্যাগ করা। এখন কেন্দ্র থেকেই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।’

১৯৭৯ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংগঠনটির প্রবীণ নেতা মো. মোজাফর হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, সহসভাপতি সৈয়দ সাহাদত হোসেন, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, ডা. মো. আব্দুল মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাউদ দৌলা, যুগ্ম সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টুসহ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক।

এদিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘আজকের মানববন্ধন বিষয়ে আমাকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। এমনকি ডাবলু সরকারের বিষয়ে সংগঠনের কেউ কোনো অভিযোগও করেননি।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নিজেদের ভেতর কাঁদা ছোড়াছুড়ি দলের জন্য ক্ষতিকর। এসব নোংরামি বন্ধ হওয়া উচিত। এগুলো না করাই ভালো। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে কেন্দ্রে লিখিত দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে আমাদের।’ 

১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের একটি ভিডিও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ স্থানীয়দের হাতে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে সমালোচনা শুরু হয়। ডাবলু সরকার জানিয়েছেন, ভিডিওর ওই ব্যক্তির ওপরের অংশটি তার হলেও নিচের অংশটি অন্য কারও, যা এডিট করে তার ভিডিওর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।