লালমনিরহাট প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১২:২০ পিএম
উজানে কয়েক দিন টানা ভারী বর্ষণে প্রাণ ফিরেছে তিস্তার। প্রবা ফটো
কিছুদিন আগে তিস্তা নদী ছিল ধু-ধু বালুচর। ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে উজানে গত কয়েক দিন টানা ভারী বর্ষণের কারণে প্রাণ ফিরেছে তিস্তার। নদীটি এখন পানিতে টইটম্বুর। তিস্তার দুই পাড়ের কৃষক ও মৎস্যজীবীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত এমন স্রোতধারা দেখা গেছে তিস্তা নদীর।
ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের পানি পরিমাপক মো. নুরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প হিসেবে পরিচিত, যেখানে বর্তমান মৌসুমে সেচের জন্যই পানিপ্রবাহ পাওয়া যায় না। কিন্তু এ বছর হঠাৎ কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত বৃহস্পতিবার থেকে পানিপ্রবাহ বেড়ে তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে। যেখানে গত বুধবার ৪৭ দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ পরিমাপ করার হয়, পরদিন বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটারে। শুক্রবারও পানিপ্রবাহ একই রকম ছিল। গতকাল শনিবার ওই পানিপ্রবাহ কিছুটা কমে দুপুরে ৪৯ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটারে দাঁড়ায়।
তিনি জানান, তিস্তায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলেরা নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করছেন। নদীর দুই তীরে জীববৈচিত্র্যেরও প্রাণ ফিরেছে। সেচ প্রকল্প এলাকায় পানিপ্রবাহও স্বাভাবিক হয়েছে। আগাম ভারী বর্ষণের কারণে চারদিকে সবকিছুরই উপকার হয়েছে।
তিস্তা নদীতীরবর্তী বাসিন্দা কৃষক আতিকুর রহমান বলেন, ‘তিন দিন ধরে তিস্তা নদীর উজানে ভারী বর্ষণের কারণে পানি কিছুটা বেড়েছে। ফলে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে তিস্তা। এতে আমাদের ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং পানি বৃদ্ধির ফলে ধু-ধু তিস্তার চরে এবং দুই তীরের জীববৈচিত্র্য প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মাটি ভিজে যাওয়ায় যেন নতুন করে সবকিছুই গজিয়ে উঠছে।’
তিস্তা দোয়ানী এলাকার জেলে এমদাদুল হক বলেন, ‘সকাল থেকে পাক জাল (ছাবি জাল) দিয়ে মাছ শিকার করছি। বৈরালী ও জয়া মাছসহ প্রায় চার কেজির মতো পেয়েছি। স্থানীয় বাজারে সাড়ে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এই অভাবের দিনে যদি তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকত তাহলে মাছ শিকার করেই এ অঞ্চলের শত শত মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারতেন। এজন্য আমরা তিস্তা নদীর খনন (তিস্তা মহাপরিকল্পনা) চাই সরকারের কাছে। ত্রাণের কোনো প্রয়োজন নেই।’
তিস্তা ব্যারাজ এলাকার দোয়ানী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি রজব আলী বলেন, ‘অনেকেই এ কয়েক দিনে প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ কেজি করে বৈরালী মাছ শিকার করেছেন। এসব মাছ স্থানীয় বাজারে সাড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কয়েক হাজার জেলের কর্মসংস্থান সচল থাকে। কিন্তু কিছুদিন ধরে পানিপ্রবাহ না থাকায় জেলেদের পেশা বদল করতে হয়েছিল।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ দৌলা বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে নদীর দুই তীরের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে। বদলে যাবে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও যোগাযোগব্যবস্থা।’