লালমনিরহাট প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩ ১৭:২৮ পিএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩ ১৭:৫১ পিএম
হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন। সংগৃহীত
হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন ও তার চাচা মফিজুল ইসলামসহ ১২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রবিবার (১৯ মার্চ) অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৪-এর বিচারিক হাকিম ইকবাল হাসান এ আদেশ দেন। এদিন দুপুরে চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুনসহ ১২ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তারা জামিন চাইলে আদালত সেটি নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন, হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন, তার ছোট ভাই মেহেদী হাসান মোহন, চাচাত ভাই রুবেল হোসেন, তাদের চাচা মফিজুল ইসলাম, সমর্থক ছাত্রদল নেতা তৌফিক হাসান অপু, উপজেলা চেয়ারম্যানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বিপ্লব চন্দ্র রায়, উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থক শমসের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহিদ হোসেন, হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ ইসলাম নয়ন, শেখর চন্দ্র বর্মণ, মাসুদ সরকার, সিফাত হোসেন ও আলাউদ্দিন নোমান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী কেএম হুমায়ুন রেজা স্বপন বলেন, ‘গত বছরের ৭ নভেম্বরের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন নাহার আমলি আদালত-৪-এ একটি অভিযোগ করেন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য হাতীবান্ধা থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। ওইদিনই হাতীবান্ধা থানা অভিযোগটি পেনাল কোডের কয়েকটি ধারা মতে রুজু করে।’
তিনি বলেন, ‘মামলায় হাইকোর্ট থেকে ২৩ নভেম্বর ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান মশিউর রহমান মামুনসহ আসামিরা। তবে হাইকোর্টের জামিন আদেশে ওই ছয় সপ্তাহের জামিন শেষ হওয়ার আগেই আসামিদের লালমনিরহাটের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলার গুণাগুণ বিবেচনায় আসামিদের জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আসামিরা হাইকোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করায় চেয়ারম্যান মামুনসহ ১২ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে যাব।’
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, গত ৭ নভেম্বর সোমবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের দুই ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন নাহার ও আনোয়ার হোসেন মিরু চেয়ারম্যান মামুনের কক্ষে যান। সেখানে তারা চেয়ারম্যানের সঙ্গে টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলতে চান। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান অফিস সহায়ককে দিয়ে তাদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। দুই ভাইস চেয়ারম্যান বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানান। পরে তারা নিজেদের অফিসে এসে দাপ্তরিক কাজকর্ম করতে থাকেন। এ সময় দুপুর ১টার দিকে চেয়ারম্যান মামুন ও তার সহযোগীরা দলবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জেসমিন নাহারের কক্ষে ঢোকেন। এ সময় তারা জেসমিনকে মারপিট ও শ্লীলতাহানী করেন। এ ছাড়া অফিস ভাঙচুর করে হত্যার হুমকি দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী প্রতাব চন্দ্র রায় বলেন, ‘চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমানের আদালতে রিভিশন করলে আদালত জামিন আদেশ বাতিল করেন। রবিবার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৪-এর বিচারিক হাকিম ইকবাল হাসানের আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এই আদেশের মধ্য দিয়ে বাদী যেমন ন্যায়বিচার পেয়েছেন, তেমনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’