আল খায়ের ফাউন্ডেশন-প্রতিদিনের বাংলাদেশ উদ্যোগ
সিলেট অফিস
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩ ২২:৪৭ পিএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৯:০৩ পিএম
সিলেটের সুবিধাবঞ্চিত ৬০ তরুণ-তরুণীর যৌতুকমুক্ত বিয়ে দিয়েছে আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ। প্রবা ফটো
‘হুরুতার বাফ ২৫ বছর আগে মারা গেছইন। চারইর গু বাইচ্চা লইয়া খাইয়া-না খাইয়া দিন কাটাইরাম। ইদিকে পুরি বিয়ারলাখ অইছে। হাতো টেখা-পয়সা নাই, খেত-কৃষিও নাই। পুরির বিয়ার চিন্তায় রাইত ঘুম আইতো না। পয়সা নায় দেখি ভালা জামাইও পাইছলাম না। অউ সময় আল্লাহর হুকুমে বড় বিপদ থাকি উৎরাইছি। মা অইয়া একখান ফরজ আদায় করলাম। দেশ-বিদেশোর বউত মাইনষে হুনছি ইখানো দান-খয়রাত করছইন। তারার লাগি দোয়া রইলো।’
মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর নিজের অভিব্যক্তি এভাবেই ব্যক্ত করছিলেন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার লেংগুড়া গ্রামের মৃত হরমুজ আলীর স্ত্রী সবিলা বেগম। তার মতো সন্তানকে বিয়ে দিতে পেরে আনন্দাশ্রুতে ভেসেছেন অনেক অভিভাবক। তাদেরেই একজন কানাইঘাটের দূর্গাপুরের আলী আহমদ।
তিনি বলেন, ‘নিজের সামান্য জমি চাষের পাশাপাশি অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। এতে কোনরকমে পাঁচজনের সংসার চললেও টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছিলাম না। ভালো ছেলের সন্ধান পেলেও দরিদ্র পরিবারের মেয়ের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে অভিভাবকরা আগ্রহী হতেন না। ২২ বছরেরর মেয়ে কুলসুমা খাতুনকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। তবে মাথার ওপর থেকে পাহাড় সমান চাপ নেমেছে। মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পেরেছি।’
ছেলেকে নিয়ে একই পরিস্থিতিতে ছিলেন গোয়াইনঘাটের জমির উদ্দিন। স্থানীয় বাজারে জ্বালানি কাঠ বিক্রি করে সংসার চালালেও সন্তানের বিয়ে দিতে পারছিলেন না টাকার অভাবে।
সবিলা বেগম, আলী আহমদ, জমির উদ্দিনের মতো হতদরিদ্র ৬০ পরিবারের নিরাশার জীবনে নতুন আশার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সিলেট বিভাগের এমন অসহায় পরিবারের ৩০ জোড়া তরুণ-তরুণীর যৌতুকমুক্ত জমকালো বিয়ের আয়োজন করে স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত। নগরীর অভিজাত আমান উল্লাহ কনভেশন হলে স্বজনদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নতুন সংসার সাজাতে বর-কনকে দেওয়া হয়েছে নানা উপহার। এরমধ্যে গৃহস্থালী, খাদ্য সামগ্রী যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে নগদ অর্থ, রিকশা, সেলাই মেশিনসহ জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার রসদ।
জৈন্তাপুর বাল্লা গ্রামের বর রাসেল আহমদ বলেন, স্থানীয় একজনের মাধ্যমে যৌতুকমুক্ত বিয়ের কথা জানতে পারি। এরপর পারিবারিকভাবে কনে ঠিক করা হয়। পছন্দের সেই মানুষকে নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে পারলাম। এ জন্য আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা।
রাসেল বলেন, ‘অখন নিজোর রিকশা চালাইমু। বউয়ে সেলাই মেশিন দিয়া কাপড় সিলাই করব। দুইজনে মিলিয়া কাম করলে সংসারে অভাব থাকতো নায়।’
নবদম্পত্তিদের শুভকামনা ও আশিস জানিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ সূচনালগ্ন থেকে সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মানবিক নানা কাজ করছে। আজকে যৌতুকমুক্ত বিয়ে আয়োজনের মাধ্যমে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। সিলেট থেকে যৌতুকমুক্ত বিয়ের এই যাত্রা আমি আশা করি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।’
বর-কনে ও তাদের স্বজনদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আজকে যারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হলেন, তারা সারাজীবন যৌতুকের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন।’
‘নব দম্পতিকে দেওয়া উপহার সামগ্রী তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহে সহযোগিতা করবে।’- যোগ করেন সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি।
এমন উদ্যোগে সহযাত্রী হতে পারার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন আল খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ সজীব। বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আল খায়ের ফাউন্ডেশন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে। গত বন্যায় সিলেটে ১০ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী ও ২৫ হাজার মানুষকে রান্না করা খাদ্য বিতরণ করে। আজ সিলেটে যৌতুকমুক্ত বিয়ে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। দেশ-বিদেশের নানাপ্রান্তের মানুষের সহযোগিতায় আনন্দময় আয়োজন সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কয়েকশ গরিব পরিবারকে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
দিনব্যাপী আয়োজনের শেষপর্যায়ে শুভকামনা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ ফিচার সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তৃতা রাখেন আমান উল্লাহ কনভেনশন হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কুদরত উল্লাহ ফাহের।