শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩ ২০:৫৫ পিএম
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩ ২২:৩৬ পিএম
মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার শাকিল মুন্সি। প্রবা ফটো
সুনামগঞ্জের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার শাকিল মুন্সি। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে তার পরিবারকে। মেধাবী এই তরুণের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। শাকিলের বাড়ি শরণখোলা উপজেলার উত্তর কদমতলা গ্রামে। বাবা রফিকুল মুন্সি দিনমজুর, মা গৃহিণী। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়া শাকিল ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫। ২০২২ সালে খুলনার সুন্দরবন কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি।
বাবা-মাসহ ছয় ভাই-বোনের সংসারে সব সময় অভাব-অনটন লেগেই আছে। তবে ছোটবেলা থেকেই শকিল লেখাপড়ায় বেশ ভালো। তার ইচ্ছে ছিল চিকিৎসক হওয়ার। সকল বাধা অতিক্রম করে মা-বাবা, ভাই-বোন ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় সেই সুযোগ সৃষ্টিও হয়েছে তার। কিন্তু অর্থাভাবে দেখা দিয়েছে কিছুটা অনিশ্চয়তা। মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও অন্যান্য খরচের টাকা জোগাড় করতে তার পরিবারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান শাকিল মুন্সি।
আবেগাপ্লুত হয়ে শাকিলের বাবা রফিকুল মুন্সি বলেন, ‘ছেলে ডাক্তারি পড়বে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি ওর জন্য কিছুই করতে পারিনি। সকলের সহযোগিতায় সে লেখাপড়া শিখতে পেরেছে। ডাক্তার হয়ে যাতে মানুষের সেবা করতে পারে। অতীতে যেমন সবাই সহযোগিতা করেছে, সেভাবে সবার সহযোগিতা চাই।’
শাকিল মুন্সি জানান, কলেজে ভর্তি হওয়ার পর খরচ জোগাতে টিউশনি করতেন। এ ছাড়া তার এক ভাই আব্দুল রাজ্জাক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করেন। আরেক বোন হোসনেয়ারা বেগম গৃহিণী। তারা দুজনেই সাধ্যমতো তার খরচ জোগাতে চেষ্টা করেছেন। এইচএসসি পাসের পর মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তিনি আরও জানান, চরম অভাবের মধ্যেই তার বেড়ে ওঠা; কিন্তু ভেতরে ছিল লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছা। পরিবার থেকে খরচ চালাতে না পারলে স্কুলের শিক্ষকরা তার বেতন মওকুফ করে দিয়েছিলেন। তারাও অনেক সময় টাকা-পয়সা, টিফিনসহ বই-খাতা কিনে দিতেন। শাকিল এসএসসি পাস করেন রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুল থেকে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুলতান আহম্মেদ গাজী তাকে সব সময় সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। চিকিৎসক হয়ে তিনি নিজের এলাকায় ফিরে মানুষের সেবা করতে চান।
রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক সুলতান আহম্মেদ গাজী বলেন, ‘শাকিল নরম স্বভাবের হওয়ায় তার সহপাঠীরা একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখত। আমি তাকে সাহস দিতাম। তার মনোবল যাতে ভেঙে না যায়, সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছি। তার সাফল্য কামনা করি।’
জানতে চাইলে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘শাকিলের বাবা দিনমজুর। তার পক্ষে মেডিকেলে শাকিলের ভর্তির টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। সে যাতে ভর্তি হতে পারে উপজেলা প্রশাসন থেকে সেই ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া অর্থাভাবে শাকিলের লেখাপড়ার যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেই ব্যবস্থাও করা হবে। আমরা এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে সার্বিক সহায়তা করব।’