হবিগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩ ১৪:২৩ পিএম
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩ ১৫:০৩ পিএম
আবর্জনা ও দখলে হারিয়ে যাচ্ছে পুরাতন খোয়াই নদী। প্রবা ফটো
হবিগঞ্জ শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরাতন খোয়াই নদী দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে প্রভাবশালী ও স্থানীয় ভূমিদস্যুরা। জেলা প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে দিনে-দুপুরে নদীতে টিনের বেড়া দিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ চলছে। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদীর সীমানা নির্ধারণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না জেলা প্রশাসন।
শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা এক সময়ের খোয়াই নদী এখন পরিণত হয়েছে খালে। নদীর পাড়ে বসবাসরত প্রভাবশালীরা গড়ে তুলছে মার্কেট ও ভবন। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) স্থানীয় নানা পেশার মানুষ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসলেও জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা পদক্ষেপ না নেওয়ায় নদীটি পুনরায় দখল হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন, ভারী বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। শহরের অধিকাংশ পানি গিয়ে পড়ে নদীতে। পাশাপাশি ময়লা আর্বজনা ফেলে নদীর পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। অবিলম্বে নদীটি দখলমুক্ত করা না হলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে।
প্রায় দেড় দশক ধরে পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের আন্দোলনের ফলে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুরাতন খোয়াই নদীর একাংশের দখল উচ্ছেদ করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ। সে সময় বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজুওয়ানা হাসানসহ অনেক পরিবেশবাদীরা আন্দোলনে অংশ নেন।
তারা বলেছিলেন, নদী শুকিয়ে গেলেও সরকারের সম্পত্তি, দখল উচ্ছেদে রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা থাকতে হবে। তবে দখল মুক্ত করার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।
কিন্তু এখন শহরের মাহমুদাবাদ, অনন্তপুর, শায়েস্তানগর এলাকায় উচ্ছেদ করা নদীর ভূমি আবার দখল করে ফেলেছে ভূমি দস্যুরা। এছাড়া মুসলিম কোয়াটার, সিনেমাহল, ঝিলপাড়, বাগানবাড়িসহ নদীর অনেক জায়গা আদালতে মামলা দিয়ে দখল করে তিনতলা, চারতলা ভবন নির্মাণ ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীটি কবে দখলমুক্ত করা হবে তা কেউ জানে না।
হবিগঞ্জের বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনসহ আমরা নদী উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছি। উচ্ছেদ কার্যক্রম না করার ব্যর্থতা জেলা প্রশাসনের। দ্রুত পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ফেলা বর্জ্য ও দূষণ বন্ধে কার্যক্রম শুরু করা হোক।’
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, ‘পুরাতন খোয়াই নদী দ্রুত দখলদারদের কবল থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। উচ্চ আদালতে রায়ের প্রেক্ষিতে সনাক্ত বা দৃশ্যমান সকল বেআইনি দখলদারদের স্থপতিসহ সকল অবকাঠামো দখলি অবস্থান অপসারণ, দখল ও দুষণমুক্ত করে স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের পিছন দিক থেকে মুসলিম কোয়াটার পর্যন্ত পূর্বে উচ্ছেদকৃত নদীর পাশ দিয়ে ৪৮০ মিটার দৈর্ঘ্যর হাঁটার পথ নির্মাণ করা হয়েছে। এ পথ চলমান রাখতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরের সহযোগিতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দখলকৃত নদীর জায়গা উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সহযোগিতা করছি।’
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘আমরা খোয়াই নদীর রেকর্ড হাতে পেয়েছি। সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে যতটুকু নদীর জায়গা আছে আমরা শীঘ্রই ডিমারগেশন করে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করব।’