মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩ ১১:২৬ এএম
মিলি। প্রবা ফটো
মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়ই নিরুদ্দেশ হন মিলি আকতারের বাবা নজরুল ইসলাম। এরপর আর ফিরে আসেননি তিনি। মিলির বয়স যখন দুই বছর, তাকে নানীর কাছে রেখে সৌদি আরবে যান মা ফরিদা ইয়াসমিন। সেখানে একটানা ২৭ বছর থাকেন তিনি। বাড়ি ফিরে এসে ফরিদা দেখেন মিলির বয়স বেড়েছে ঠিকই, তবে শরীরের উচ্চতা বাড়েনি। হরমোনজনিত কারণে টানা ৩০ বছরে মিলির শরীরের উচ্চতা হয়েছে মাত্র ২ ফুট ৪ ইঞ্চি (৭১ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার)। ফরিদা সৌদি আরবে থাকার সময় দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। দুই বছর আগে সেই স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
মিলিদের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গুলিশাখালী গ্রামে। তার জন্ম ১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। মিলিকে সঙ্গে নিয়ে এখন পাঁচজনের সংসার ফরিদার। মিলি অনেকটা স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন, শোনেন এবং মাকে বাড়ির কাজে সহযোগিতা করেন। লেখাপড়া করবেন কি না জানতে চাইলে মিলি বলেন, ‘বই নাই। বই পেলে আমি পড়ব’।
ফরিদা ইয়াসমিন জানান, নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারেন মিলি। বেশিরভাগ সময়ই তিনি ছোট ভাইয়ের সঙ্গেই থাকেন। ফরিদা অসুস্থ সেটিই তিনি বোঝেন। এ কারণে মায়ের কাছে তেমন কোনো আবদার করেন না। ফোনে গেম খেলতে ও গান শুনতে পছন্দ করেন মিলি। এছাড়া নাচ দেখার প্রতিও তার বেশ আগ্রহ। মাছ, মাংস, পিঠা এবং ফলের মধ্যে আপেল ও কমলা খেতে পছন্দ করেন মিলি। তার ইচ্ছা, কোনো একসময় তাদের দোতলা বাড়ি হবে। বাড়িতে নানা গবাদি প্রাণী পালবেন। এছাড়া বিয়েও করতে চান মিলি।
মিলির ফরিদা বলেন, ‘পাঁচ মাস বয়সে মিলিকে গর্ভে রেখে এবং সাড়ে তিন বছরের বড় মেয়ে পলি আক্তারকে ফেলে ওর বাবা চলে যায়। অভাবের সংসারে অনেক যুদ্ধ করে বড় মেয়েকে কোনোমতে লেখাপড়া করিয়ে বিবাহ দেওয়া হয়। মিলি জন্মের পর থেকে ওকে কোনো চিকিৎসা ও ভালো খাবার দিতে পারিনি। নিজে পরে আবার বিবাহ করি। এ দুই মেয়েকে নিয়ে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটা উপজেলার বর্তমান স্বামীর বাড়ি যাই। সেখানেও বসবাস করতে পারিনি। স্বামীকে নিয়ে নিজের জন্মস্থানে ফিরে এসেছি। এ ঘরে একটি মাত্র ছেলে কলেজ পড়ুয়া। অর্থের অভাবে তারও পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। ৪২ শতক জমি ক্রয় করে বসতভিটাটুকু এখন সম্বল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, ছেলে নাইমুল ইসলামের জন্য সরকারি একটি চাকরি হলে সংসারের সবাইকে নিয়ে দুমুঠো খেয়েপরে বেঁচে থাকা যেত।’
মিলির বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, ‘শরীরের জেনেটিক সমস্যার কারণে এরকম খর্বাকৃতি হতে পারে। উন্নত চিকিৎসায় তার শারীরিক পরিবর্তন তেমন না হলেও তার মানসিক ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম তারেক সুলতান বলেন, ‘ক্ষুদে মানুষ শুধু মিলি নয়, সকলের জন্যই সরকারের সামাজিক বেষ্টনি প্রকল্পের আওতায় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ওই পরিবারটির খোঁজখবর নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।’
গিনিস বিশ্ব রেকর্ড অনুযায়ী, ইরানের আফশিন এসমায়েলি ঘাদেরজাদেহ বিশ্বের সবচেয়ে স্বল্প উচ্চতার মানুষ। ২০০২ সালের ১৩ জুলাই জন্ম নেওয়া আফশিনের উচ্চতা ২ ফুট ১.৬ ইঞ্চি (৬৫ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার)।