চট্টগ্রামের নাজিরহাট পৌর নির্বাচন
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩ ২২:০৯ পিএম
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩ ২২:২২ পিএম
নাজিরহাট পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যস্ত দলীয় ও প্রার্থীদের পরিবারের সদস্যরা। প্রবা ফটো
প্রচার-প্রচারণার শেষ মুহূর্তে বেশ জমে উঠেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভা নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। কাঙ্ক্ষিত সেবা ও এলাকার উন্নয়ন করতে পারবে, এমন প্রার্থীকে বেছে নিতে চান ভোটাররা। অন্যদিকে উন্নয়নের মাধ্যমে বৈষম্যহীন আধুনিক পৌরসভা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরাও। প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে দলীয় ও প্রার্থীদের পরিবারের নারী সদস্যদের। এদিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে পৌরসভার সমস্ত অলিগলি সাজ-সাজ রব। অনেকে আবার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালাচ্ছেন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, দিচ্ছেন নানান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। নির্বাচিত হলে আধুনিক পৌরসভা গড়া ও সব ধরনের নাগরিক সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। উঠান বৈঠক, চা-চক্র ও কুশলাদি বিনিময়সহ সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে জেতাতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নারী নেত্রীরা। ভোটারদের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ করা যাচ্ছে।
নির্বাচনে মেয়র-কাউন্সিলর মিলিয়ে ১৩টি পদে ৫৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে আছেন পাঁচজন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ কে জাহেদ চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী জগ মার্কা প্রতীকে ইসমাইল গণি, নারকেল গাছ প্রতীকে নাসির উদ্দিন চৌধুরী, মোবাইল প্রতীকে আনোয়ার পাশা, চামচ প্রতীকে জাহাঙ্গীর চৌধুরী। তাদের মধ্যে আনোয়ার পাশা ও জাহাঙ্গীর চৌধুরী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
দলীয় পদ-পদবির বাইরেও সজ্জন ব্যক্তি বলে পরিচিত জাহেদ চৌধুরীর এলাকায় আছে নিজস্ব অবস্থান। তবে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত নাজিরহাটে পূর্বসূরিদের মতো তার জন্যও নির্বাচনী বৈতরণী পার করা কঠিন হবে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া আছে দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী।
এ নির্বাচনে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জগ মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসমাইল গণি। সৎ ও নীতিবান বলে পরিচিত তরুণ এই আইনজীবী অল্প দিনেই চষে বেড়িয়েছেন পৌরসভার অলিগলি। বর্তমানে কোনো রাজনীতিতে জড়িত না থাকলেও একসময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। যে কারণে স্থানীয় জামায়াত-শিবির ও বিএনপি সমর্থকদের সমর্থন পাচ্ছেন।
এদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন না করার ঘোষণা দেওয়ায় মেয়র পদে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করছেন পৌর বিএনপির সদস্য ও ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন চৌধুরী। দলীয় কার্যক্রমে তাকে তেমন দেখা না গেলেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে নিজেকে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী বলেই দাবি করছেন।
এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় নারী ভোটারদের লক্ষ্য করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী বলেন, মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের ৫০ জন কর্মী দিয়ে পাঁচটি টিম করে প্রতিদিন প্রচারণা চালাচ্ছি। প্রার্থীর স্ত্রী কহিনুর আক্তারও সহযোগিতা করছেন। আমরা ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছি। তবে সরকারদলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে তাদের পরিবারের নারী সদস্যরাও ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ভোটাররা বলছেন, এবার প্রার্থীর যোগ্যতা বিবেচনা করে ভোট দেবেন তারা। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার নুরুল আলম বলেন, এবার বুঝেশুনে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব। অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিলে খেসারত দিতে হয়।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ কে জাহেদ চৌধুরী বলেন, ’নির্বাচিত হলে নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে সবাইকে নিয়ে একটি আধুনিক পৌরসভা গড়ে তুলব, এখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য। আশা করি, পৌরবাসী তাদের মূল্যবান রায় প্রদানের মাধ্যমে আগামী ১৬ মার্চ আমাকে তাদের সেবক হিসেবে নিয়োগ দেবেন।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছির উদ্দিন বলেন, ’আমি পৌরবাসীকে বুকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। তাদের সেবা করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচিত হলে একটি আধুনিক পৌরসভা গড়ে তুলতে কাজ করব।’
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোটের দিন ২২টি কেন্দ্রে ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। এ ছাড়া ভোটার ও ভোটগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের ও র্যাবের মোবাইল টিম ও ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির রাহমান সানি বলেন, ’সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এ ছাড়া আচরণবিধির মোবাইল কোর্ট চলমান আছে। প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন না করার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’
জেলা সহকারী আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার তারিফউজ্জামান জানান, পৌর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুরো পৌরসভা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। এক্ষেত্রে তিনি প্রার্থী ও ভোটারদের সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করেন।