গাইবান্ধা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩ ১৯:৫৩ পিএম
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩ ২০:২৫ পিএম
বিচারের অপেক্ষায় এখনও দিন গুনছেন স্বজনরা। প্রবা ফটো
বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে গাইবান্ধার দুই কৃষক মোমিন মণ্ডল ও টুকু মিয়াকে গুলি করে হত্যার ১৮ বছর উপলক্ষে কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে এলাকাবাসী। তবে পরিবারের ক্ষোভ, হত্যার কোনো বিচার হয়নি, তাদের দেওয়া হয়নি কোনো ক্ষতিপূরণ। বিচারের অপেক্ষায় এখনও দিন গুনছেন তারা। কিছুদিন আগে কৃষক নেতারা এসে মোমিনের কবরটি পাকা করে দিয়েছেন। এখন পাকা করা কবরটাই তাদের একমাত্র সান্ত্বনা বলে জানান স্বজনরা।
১৯৯৫ সালে সার, তেল, কীটনাশক ও কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ও সংকট তৈরি হলে চাষাবাদ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন গাইবান্ধার কৃষকরা। সার না পেয়ে হাজার হাজার কৃষক বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় আন্দোলনকারী কৃষকের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। এতে নিহত হয় গাইবান্ধা সদর উপজেলা বল্লমঝাড় ইউনিয়নের কৃষক মোমিন মণ্ডল ও জিরাই গ্রামের কৃষক টুকু মিয়া। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এ হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ পায়নি স্বজনরা।
নিহত মোমিন ছিল নবম শ্রেণির ছাত্র। বাবা মজিবর রহমানের সঙ্গে জমিতে কৃষিকাজের জোগান দিত মোমিন। ২২ মার্চ গাইবান্ধার সরকারি সার গোডাউনের সামনে সেও গিয়েছিল সারের খোঁজে। মোমিনের মা সাজেদা বেগম বলেন, ‘আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হলো, কিন্তু আমাদের মামলা করতে দেওয়া হলো না। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার দেখতে চাই।’
মোমিনের ছোট ভাই মজনু মিয়া ভাই হত্যার বিচার চেয়ে জানান, আমাদের দাবি এই সরকার আমাদের ক্ষতিপূরণ দিক। তখন মামলা নেওয়া হয়নি থানায়, কিন্তু এখন তারা মামলা করতে চান।
অন্যদিকে মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশনে ব্যবসায়ীরা কয়েক ওয়াগন সার নিয়ে আসে এমন খবর পেয়ে রাতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশনে সমবেত হয় চাষিরা। সেখানে সারের খোঁজে উপস্থিত ছিল জিরাই গ্রামের নয়া মিয়ার একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে টুকু মিয়া। ওই সময় তৎকালীন পুলিশ বাহিনী সারের খোঁজে আসা কৃষকদের ওপর গুলি চালায়। এতে নিহত হয় টুকু।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম জানান, সেদিন কৃষকের সারের চাহিদা মেটাতে পারছিলেন না সরকার। কোথাও বেশি দাম দিয়েও এক বস্তা ইউরিয়া সার পাওয়া সম্ভব ছিল না।
সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা মিহির ঘোষ বলেন, ’সার না পেয়ে হাজার হাজার কৃষক বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। এ সময় আন্দোলন করলে কৃষকের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, জোট সরকার কৃষক হত্যা করেছে। বর্তমান সরকার কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে।