১১ বছরের শিশু কন্যার পা পলিথিন পেঁচিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে সৃষ্টি হয় ক্ষত। সেই ক্ষত নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় যখন মেয়েটি কান্না করতো, তখনই তাকে বসিয়ে দেওয়া হয় ভিক্ষা করতে। সাধারণ মানুষ এমন ক্ষত দেখে একটু বেশি ভিক্ষা দিতো। ভিক্ষার টাকায় মা খেলতেন জুয়া, ব্যবহার করতেন র্স্মাটফোন।
অবশেষে হোসনে আরা নামের সেই মাকে সোমবার (১৩ মার্চ) সকালে রাঙামাটি সদর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের আনার পর পিবিআই কর্মকর্তাদের চোখ উঠল কপালে। কারণ তাকে দেখতে একদল ভিক্ষুক পৌঁছে গেলেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ে। শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান এসব ভিক্ষুকই হোসনে আরার সঙ্গী।
হোসেন আরা আইনের খাঁচায় বন্দি হওয়ার পথ তৈরি করেছিলেন নিজেই। গত বছরের ২৭ এপ্রিল তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-৭ এ শিশুটিকে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করেছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ বদনাশাহ মাজারের সামনে থেকে তার মেয়েকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করেছে এক দম্পতি। ওই দম্পতির ঘরে শিশুকে কাজ করত এক সময়। রাশেদুল আলম ও ফারজানা আলী চৌধুরী দম্পতির বিরুদ্ধে মামলার পর আদালত তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্ত শেষে পিবিআই উপপরিদর্শক জাহেদুজ্জামান চৌধুরী আদালতে গত বছরের সেপেটম্বর মাসে প্রতিবেদন দেন। এতে উল্লেখ করা হয়, সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শিশুটিকে ওই দম্পতির কাছে তুলে দিয়েছেন হোসনে আরা নিজেই। ওই দম্পতি অপহরণের সারেথ জড়িত নয়।
এই বিষয়ে গত বছরের ১ জুন শিশুটি মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে আদালতকে জানায়, বদনাশাহ মাজার গেটে শিশুটি মায়ের সঙ্গে ভিক্ষা করত। বেশি ভিক্ষা পাওয়ার জন্য পায়ে পলিথিন পেঁচিয়ে পুড়িয়ে দেয় পা। এতে ক্ষত সৃষ্টি হলে তা দেখিয়ে ভিক্ষা করাতো। আর ভিক্ষার টাকায় মা লুডু খেলত। পরবর্তীতে ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি বাসায় কাজ করতে দেন। পরে আবার তাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরিয়ে নিতে চায় মা। কিন্তু শিশুটি রাজি হয়নি।
শিশুর কাছ থেকে এমন জবানবন্দি পেয়ে আদালত মায়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। এরপর পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক নুরুল আলম বাদী হয়ে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত বছরের ১৯ নভেম্বর দায়ের করা মামলায় শিশুকে ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত করার অভিযোগে শিশু আইন ২০১২ এর ৭১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
সেই মামলাটি এখন তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক মর্জিনা আকতার। তিনি বলেন, নিজের মেয়েকে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত করার অভিযোগে মাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে। আর শিশুটি এখন চট্টগ্রামের ফরহাদাবাদ এলাকায় মহিলা ও শিশু কিশোরী নিরাপদ হেফাজাতি বন্দি আবাসন কেন্দ্রে আছে।