× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ভোগান্তির শেষ নেই

নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩ ১১:৪৩ এএম

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৩ ১১:৪৪ এএম

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারে রোগীদের ভিড়। প্রবা ফটো

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারে রোগীদের ভিড়। প্রবা ফটো

নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল। জেলার চিকিৎসাসেবার অন্যতম ভরসাস্থল এই হাসপাতালে রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ভোগান্তিও।

চিকিৎসক ও জনবল সংকটের পাশাপাশি পরীক্ষা এবং ওষুধের অপর্যাপ্ততাসহ নানা সীমাবদ্ধতায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বেশিরভাগ মানুষ। এ ছাড়া দালালদের দৌরাত্ম্যে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে বছর দুয়েক আগেও প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসত। বর্তমানে সেই সংখ্য দাঁড়িয়েছে ৬-৭ গুণ। রোগীর এই চাপে সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থায় বেড়েছে ভোগান্তি। এর মধ্যে চিকিৎসক সংকট ভোগান্তির মাত্রাকে বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসাসেবা সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হচ্ছে গাইনি, শিশু ও ইএনটি (নাক, কান ও গলা) বিভাগে। গুরুত্বপূর্ণ এই তিন বিভাগ চলছে সিনিয়র কনসালট্যান্ট ছাড়াই। জুনিয়র চিকিৎসক দিয়েই চলছে সেবা। অন্যদিকে হাসপাতালের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেন্টারগুলোর নিয়োজিত দালালদের খপ্পরে প্রতারিত হচ্ছেন হাজারো সেবাপ্রার্থী। রোগী আসতেই দালালরা টানাটানি শুরু করে।

নগরের বাসিন্দা গৃহবধূ তাহমিনা। ছেলে পড়ে গিয়ে নাকে ব্যথা পায়। চিকিৎসা নিতে এসে দালালদের উপদ্রবে বিরক্ত হয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, হাসপাতালে আসতেই প্রকাশ্যে দালালরা তাদের পছন্দমতো সেন্টারে নেওয়ার জন্য টানাটানি করে। এতে রীতিমতো বিব্রত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। বন্দর মাহমুদ নগর এলাকার সেবাপ্রার্থী সন্তানসম্ভবা মাহফুজা অভিযোগের সুরে বলেন, এই হাসপাতালে সমস্যার শেষ নেই, একটা থাকলে আরেকটা নেই।

এ ছাড়াও হাসপাতালটিতে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জরুরি চিকিৎসা নিতে। প্রায়ই দ্বিগুণ ভাড়ায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে হয় রোগীর স্বজনদের। লোকবল সংকট থাকায় করা যায় না প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরীক্ষানিরীক্ষা। এ ক্ষেত্রে ছুটে যেতে হয় হাসপাতালের বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। মেলে না পর্যাপ্ত ওষুধও।

জ্বরে আক্রান্ত আরিফার স্বজন কাকলী বলেন, সকল ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। আমাদের কিছু সামর্থ্য থাকায় কিনছি। কিন্তু যাদের সামর্থ্য নেই তারা কেমনে কী করবে। সেবাপ্রার্থী পূজা জানান, তাকে একটি টেস্টের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়েছেÑ বাইরে থেকে করতে। এগুলো এখানেই তো করা যায়, তবে বাইরে কেন বুঝি না।

বক্তাবলী এলাকার বাসিন্দা শহীদ বলেন, দাপট আর পরিচিতি থাকলেই ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ভালো সেবা পাওয়া যায়। তবে অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য সমস্যা। কিছু ডাক্তার বাইরের টেস্ট করার জন্য লিস্ট হাতে ধরিয়ে দেন।

আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, সেবা বাড়ানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দালালমুক্ত করতে শিগগিরই দেওয়া হচ্ছে সবার পরিচয়পত্র। এরই মধ্যে গ্রহণ করা নানা কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ১০ শয্যার আইসিইউ, ২০ শয্যার আইসোলেশন ও ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস বিভাগ চালু রয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। আগে একটি জেনারেটর থাকলেও এখন বিকল্প একটি বিদ্যুৎ লাইনসহ করা হয়েছে। নিশ্চিত করা হয়েছে লিফট সুবিধাও। 

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডা. নাজমুল বলেন, জরুরি বিভাগে দিন দিন রোগীর চাপ বাড়ছে। সেবার মান বাড়িয়ে আমরা চেষ্টা করছি সেবা দিতে। জনবল সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। দালালচক্র প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে এটা থাকবে না।

গাইনি বিভাগের নার্সিং অফিসার রীতা জানান, হাসপাতালে ডেলিভারি রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। যন্ত্রাংশের কোনো অভাব না থাকায় আগের থেকে ভালো সেবা পাচ্ছে মানুষ। ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ৫ জন ডাক্তার প্রতিদিন রোগী দেখছেন, নার্সের সংখ্যাও বেড়েছে।

হাসপাতালের আরএমও ডা. শেখ ফরহাদ বলেন, হাসপাতালে আগের তুলনায় এখন ৬-৭ গুণ রোগী বেশি আসে। আগের থেকে সেবার মান বেড়েছে বলেই রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে দালালদের হয়রানি হয় না- সেটা বলব না। দুয়েকটা ঘটনা এমন হতে পারে। মানুষের গায়ে তো আর দালাল লেখা থাকে না। 

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে লোকবল কম, যার কারণে সেবা কিছুটা ব্যাহত হয়। বেশিরভাগ পরীক্ষাই হাসপাতালে করা হয়। কিছু কিছু পরীক্ষার জন্য বাইরে যেতে হয়। আর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য ডাক্তার যদি ভালো সেন্টারের নাম বলে থাকেন, সেটা রোগীর প্রয়োজনের খাতিরে বলেন। পরীক্ষাটা ভালো জায়গা থেকে না করালে সে তো ভালো চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হলো।

নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ও কনসালট্যান্ট আছে, তবে সিনিয়র কনসালট্যান্ট নেই। বদলিজনিত কারণে শূন্য রয়েছে। শিগগির তা পূরণ হয়ে যাবে। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, কেউ যদি অনিয়ম করে তাহলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা