× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খেলার মাঠ নেই, শিশুরা আসক্ত হচ্ছে মোবাইলে

মেরিনা লাভলী, রংপুর

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩ ১৩:৫৯ পিএম

ফটো সংগৃহীত

ফটো সংগৃহীত

রংপুরে হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। ফাঁকা জায়গা নেই বললেই চলে। শহরে জনসংখ্যার চাপে সবখানে গড়ে উঠছে অট্টালিকা। গ্রামেরও প্রায় একই অবস্থা। কৃষিজমিতে হচ্ছে ঘরবাড়ি। একসময় গ্রামে ফসল কাটার পর ফাঁকা জমিতে খেলাধুলা হতো। কিন্তু এখন সে সুযোগও প্রায় হাতছাড়া।

এতে গ্রাম কিংবা শহরের শিশু-কিশোর, উঠতি বয়সি তরুণরা মাঠের অভাবে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। অল্প যে কয়টি মাঠ রয়েছে সেখানেও সবাই খেলাধুলা করার সুযোগ পায় না। এতে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হচ্ছে না শিশু-কিশোরদের। বিশেষ করে নগরের শিশু-কিশোররা বিপদগ্রস্ত হচ্ছে। ডুবে থাকছে মোবাইল গেমসে। আর তরুণরা মাদক-সন্ত্রাসে লিপ্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতনরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে নগরীতে বেড়েছে জনসংখ্যা। ২০৫ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের আওতাধীন ১১২টি মৌজার ৪৪২টি মহল্লায় বর্তমানে ১০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস।

মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ লাখের বেশি শিশু-কিশোর বেড়ে উঠছে রংপুর নগরীতে। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে রংপুর ক্রিকেট গার্ডেন, রংপুর শেখ রাসেল স্টেডিয়াম, কালেক্টরেট ঈদগাহ্ মাঠ ছাড়া নগরীতে উল্লেখযোগ্য কোনো মাঠ নেই। এর মধ্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালিত ক্রিকেট গার্ডেন ও রংপুর স্টেডিয়াম মাঠে সবার খেলাধুলায় আছে বাধ্যবাধ্কতা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রংপুর জিলা স্কুল, কারমাইকেল কলেজ মাঠ, শালবন মিস্ত্রিপাড়ার কৈলাশ রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, টেকনিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাস মাঠই খেলাধুলার একমাত্র ভরসা নগরীর প্রাণকেন্দ্রসহ আশপাশে বসবাসকারী শিশু-কিশোর ও তরুণদের জন্য। 

রংপুর সিটি করপোরেশনে থাকা সাবেক পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ড ছাড়া বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডে এখনও গ্রামীণ ছোঁয়া রয়েছে। এসব এলাকায় খেলাধুলা করতে শিশু-কিশোরদের অপেক্ষা করতে হতো ফসল কাটা পর্যন্ত। কৃষকরা ফসল ঘরে তুলে নেওয়ার পর ১৫ থেকে ২০ দিন ফেলে রাখা জমিতে খেলাধুলার ধুম পড়ে যেত। আয়োজন করা হতো ফুটবল, ক্রিকেট, বিভিন্ন গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার। মাঠ না থাকায় স্বল্প সময়ে সেই খেলাধুলার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোর, তরুণরা। 

রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার আগে নগরীর স্টেশন আলমনগরের আরডিসিসিএস লি.-এর মাঠ, নগরীর সাতগাড়া মিস্ত্রিপাড়া মাঠ, রহিম উদ্দিন ভরসার মাঠসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি জমিতে খেলার মাঠ ছিল। সেখানে সকাল-সন্ধ্যা শিশু-কিশোর-তরুণরা ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, ঘুড়ি ওড়ানোসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলা করত। কিন্তু নগরায়ণের ফলে সেসব খেলার প্রতিযোগী ও দর্শকদের উচ্ছ্বাস মিলিয়ে গেছে বাজার ও দালানকোঠার মাঝে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আরডিসিসিএস লি.-এর পাশে থাকা বিশাল মাঠে এখন গড়ে উঠেছে কাপড়ের মার্কেট ও আবাসিক বাড়ি। সাতগাড়া মিস্ত্রিপাড়ার ১৯২ শতকের মাঠে এখন বহুতল অট্টালিকা গড়ে উঠেছে। কেরানীপাড়া চৌরাস্তার মোড় ব্যাংকের গলি ও স্টাফ কোয়ার্টারের পেছনের মাঠ নেই। রহিম উদ্দিন ভরসা মাঠের জমিতে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নগরীর বর্ধিত এলাকা কেরানীরহাট এলাকায় কোনো মাঠ নেই। বিন্নাটারী, জগদীশপুর, মন্ডলপাড়া, কামদেবপুর, তেলীটারী, বখতিয়ারপুরসহ আশপাশের শিশু-কিশোর, যুবকরা ফসল কর্তন মৌসুমে খেলাধুলা করত। ফসলের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় এখন আর সেই সুযোগ নেই।

নগরীর মুন্সিপাড়ার মেফতাব আবির (২৪) বলেন, সাতগাড়া মিস্ত্রিপাড়ার বিশাল মাঠটি নিচু থাকায় বর্ষাকালে খেলাধুলা করা যেত না। শীত আসার আগে শুকিয়ে গেলে আমরা সেখানে খেলতাম। লুকোচুরি, দাঁড়িয়াবান্ধা, ক্রিকেট, ফুটবল খেলা হতো। এলাকার সবাই মিলে ঘুড়ি ওড়াতাম। এখন মাঠও নেই, সেই আনন্দ নেই।

শিশু সংগঠক সামিয়া আক্তার (১৮) বলেন, ছেলেমেয়ে উভয়ের খেলাধুলার সুযোগ দিতে মাঠের ব্যবস্থা করা জরুরি।

রংপুর ধাপ সাতগাড়া বায়তুল মোকাররম মডেল কামিল মাদ্রাসার ক্রীড়া শিক্ষক শাহীন মিয়া বলেন, রংপুর নগরী কিংবা গ্রামে এখন মাঠ নেই। ফলে শিশু-কিশোররা একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা ও আনন্দ করার সুযোগ পাচ্ছে না। অর্জন করতে পারছে না নেতৃত্বগুণ। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, শিশু-কিশোরের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা খুবই জরুরি।

রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নগরীর কুকরুলে একটি খেলার মাঠ কাম ঈদগাহ মাঠ করা হয়েছে। খেলার মাঠ নির্মাণে প্রত্যেক এলাকার মানুষ যদি এগিয়ে আসে তবেই মাঠ নির্মাণ করা সম্ভব। প্রতিটি ওয়ার্ডে মাঠ নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা