ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩ ২০:২২ পিএম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৩ ২১:৫৯ পিএম
পরশুরাম উপজেলায় দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ল প্রায় ২৫ একর বনজ গাছের বাগান। এতে ২৫ পরিবারের প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রবা ফটো
ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ল প্রায় ২৫ একর বনজ গাছের বাগান। এতে ২৫ পরিবারের প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি পুড়েছে তাদের স্বপ্নও। তবে কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, চোরাকারবারি বা মাদক ব্যবসায়ীরা এ নাশকতা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
রবিবার (৫ মার্চ ) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত বাগানমালিকদের পক্ষে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আল-আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে পরশুরাম থানায় মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ের আসামি করা হয়েছে। এর আগে গত বুধবার বিকালের দিকে উপজেলার পৌর এলাকার বাঁশপদুয়া গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় ১০টি বাগানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে শুক্রবার রাতে আরও কয়েকটিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
মামলার এজাহারে আল-আমিন চৌধুরী উল্লেখ করেন, তার দুই একর বাগানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও তার গ্রামের বিভিন্নজনের আরও প্রায় ২৩ একর বাগানে আগুন দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ’২০১৪ সালে ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকার ঋণ নিয়ে এক একর বনজ গাছের বাগান করেছিলাম। গত সপ্তাহে বাগানের গাছ একজন কাঠ ব্যবসায়ী ৬ লাখ টাকায় কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু দাম কম হওয়ায় বিক্রি করিনি। আগুনে বাগানের সব গাছ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বাঁশপদুয়া গ্রামের প্রায় ২৫টি পরিবার অনাবাদি ২৫ একর উঁচু জমিতে পৃথক পৃথক বনজ গাছের বাগান করেছেন। বেশিরভাগ বাগানের গাছ বিক্রির উপযুক্ত হয়েছে। অনেকে বিক্রির প্রস্তুতিও নিয়েছেন। আগুনে পুড়ে যাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেউ কেউ সর্বশান্ত হয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, বনজ গাছের বাগানের বিশাল এলাকাজুড়ে পুড়ে গেছে। গাছগুলোর সবুজ পাতা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে আছে শুধু গাছের গুঁড়ি। ধারণা করা হচ্ছে, চোরাকারবারিদের নাশকতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ব্যক্তিমালিকাধীন বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা এসব বাগান। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয়রা দাবি করছেন।
তারা জানিয়েছেন, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি বাঁশপদুয়া গ্রামের আবুল কাশেম চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর পিকে মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, জনতা ব্যাংকের সাবেক এজিএম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের ঢাকার কলাবাগান থানার সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি টিপু সুলতান চৌধুরীর প্রায় পাঁচ একর বাগানের গাছ সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এতে তাদের ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পরশুরাম পৌরসভার কাউন্সিলর ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাগানের মালিক নিজাম উদ্দিন সুমন বলেন, ’আমার এক একর বাগানের গাছ পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
সাবেক যুগ্ম সচিব নুরুল করিম মজুমদার বলেন, ’আমার বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা এক একর বনজ গাছ পুড়ে গেছে। এতে আমার প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
জানতে চাইলে পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের আগুনে প্রায় ২৫ একর বনজ গাছের বাগান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাগানমালিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’