পাবনা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:১১ এএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:১২ এএম
ভবনের পলেস্তারা খুলে ও জানালা দরজা ভেঙে পড়েছে। প্রবা ফটো
ঈশ্বরদীর রেশম বীজাগারে একসময় পলু পালন, রেশম ডিম, রেশম গুটি উৎপাদন করা হতো। গুটি থেকে হতো সুতা। সে সুতা রাজশাহী সিল্ক কারখানায় যেত। তৈরি হতো বিশ্ববিখ্যাত সিল্কের শাড়িসহ নানান পোশাক। কিন্তু বর্তমানে কিছু তুতগাছের চারা উৎপাদন ছাড়া বন্ধ রয়েছে বাকি সব কার্যক্রম।
প্রতিষ্ঠানটি সব মিলিয়ে মাসে ১০ থেকে ১৫ দিনের মতো সচল থাকে। ফলে ভেতরে তৈরি হয়েছে ভুতুড়ে পরিবেশ। অপরদিকে আর্থিক বরাদ্দ ও জনবলের তীব্র সংকট বীজাগারটির ভগ্নদশাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
বীজাগারের অফিস পরিচালনায় ১৭ পদে লোকবল থাকার নিয়ম থাকলেও মাত্র একজন ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) রয়েছেন। বাকি সব পদই খালি। মাসিক চুক্তিভিত্তিক একজন কম্পিউটার অপারেটর, দৈনিক হাজিরাভিত্তিক ২২ জন শ্রমিক ও চারজন নৈশপ্রহরী নিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম।
১৯৬২ সালে ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের অরণকোলা মৌজায় ১০৭ বিঘা ১২ কাঠা জমিতে এই রেশম বীজাগার স্থাপিত হয়। এখানে তুতগাছের জন্য আবাদি জমি রয়েছে ৫৯ বিঘা। বাকি ৩৮ বিঘা জমিতে অফিস, আবাসিক ভবন, পলু পালন ঘর, তাঁতঘরসহ চারটি পুকুর রয়েছে।
বীজাগারে তুতগাছের চাষেও নেই সফলতা। পলু পোকা পালন, রেশম গুটি ও রেশম ডিম উৎপাদন বন্ধ থাকায় তুতগাছের ভারো পরিচর্যা করা হয় না। প্রায় ৫০ হাজার তুতগাছ মরে যাচ্ছে। বীজাগারের একতলা চারটি ও দোতলাবিশিষ্ট দুটি বড় ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একতলা চারটি ভবন পরিত্যক্ত। ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে গেছে। জানালা-দরজা ভেঙে লতাপাতা গজিয়ে উঠেছে। আশপাশে ঝোপঝাড় হয়ে বিরাজ করছে ভুতুড়ে পরিবেশ।
রেশম বীজাগারের বেশিরভাগ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেখানে লতাপাতায় ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রবা ফটো
শ্রমিকরা জানান, বর্তমানে ৩৫ বিঘা জমিতে তুতের চারার চাষ হচ্ছে। ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর রেশম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই তুতের চারা উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়া হয়। চারা উৎপাদনের কাজ থাকে মাসে ১০ থেকে ১৫ দিন হয়। বাকি দিন বন্ধ থাকে। ফলে নির্দিষ্ট কাজের অভাবে শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।
বীজাগারের শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুবল সরকার জানান, শ্রমিকদের পুরো মাস কাজের সুযোগ নেই। মাসের অধিকাংশ দিন কাজ থাকে না। অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ পলু পালন, রেশম ডিম, রেশম গুটি উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। বীজাগারে শ্রমিকরা অবসরে যাওয়ার সময় খালি হাতে বিদায় নেন। বৃদ্ধ বয়সে অর্থকষ্টে তারা মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হন।
বীজাগারের ভারপ্রাপ্ত ফার্ম ম্যানেজার হায়দার আলী জানান, রেশম উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনায় বিনামূল্যে বিভিন্ন এলাকার চাষিদের মাঝে তুত চারা বিতরণ করা হয়। পলু পোকা পালন, রেশম ডিম ও গুটি উৎপাদনে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এ কাজেও গতি নেই।
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান জানান, জনবল সংকটের কারণে ঈশ্বরদী রেশম বীজাগারে অনিয়মিত শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পলু পালন, রেশম ডিম ও গুটি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সরকারি বরাদ্দ পেলে পুনরায় সব কার্যক্রম চালু করা সম্ভব।