পঞ্চগড় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩ ২১:১১ পিএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩ ২১:৩৮ পিএম
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ‘সালানা জলসা’-কে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন শনিবারও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। প্রবা ফটো
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ‘সালানা জলসা’-কে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন শনিবারও (৪ মার্চ) পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। সকালে শহরের দোকানপাট খুলেছে, যান চলাচলও করেছে। দুপুরের দিকে যান চলাচল কিছুটা বাড়তে থাকে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, বিপণিবিতানসহ সব ধরনের দোকান খুললেও ক্রেতার উপস্থিতি ছিল কম। এলাকার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
বিকালের পর থেকে শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দোকানপাট বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। দোকানদারসহ সাধারণ মানুষকে বাসায় চলে যেতে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দেয় বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় শহরে যান চলাচল অনেকটাই কমে যায়।
শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। জোরদার টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি। তবে এদিন বিক্ষোভকারীদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
শুক্রবারের এই সংঘর্ষে নিহত আরিফ হোসেনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার বিকালে। পৌরসভার রামের ডাংগা এলাকায় অনুষ্ঠিত জানাজায় হাজারও মানুষের সমাগম ঘটে। জানাজাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরদার টহল ছিল।
ওই সংঘর্ষের ঘটনায় পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদ পাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে আরিফুর রহমান (২৭) এবং নাটোর জেলার বনপাড়া এলাকার ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান (২২) নামে দুজনের মৃত্যু হয়। নিহত জাহিদ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত হন অন্তত ৬০ জন।
এ ছাড়া, বিকাল সাড়ে ৩টায় সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা দাবি করেন, হামলাকারীরা তাদের অর্ধশত বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে তালিকা করা হচ্ছে বলে জানান তারা।
জলসা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক আহমেদ তবশের চৌধুরী বলেন, ‘হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় এজাহার দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ এজহার গ্রহণ করেনি। পুলিশ যদি আগে থেকেই নিরাপত্তা দিত, তাহলে এত হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি হতো না।’
সংবাদ সম্মেলনে জলসা কমিটির গণমাধ্যম কর্মকর্তা মাহমুদ আহমেদ সুমনসহ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার সকাল থেকে বাস ও মাইক্রোবাসে জলসা এলাকা ছেড়ে যেতে থাকেন জলসায় অংশ নিতে আসা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন। পঞ্চগড় থেকে চলে যেতে তাদের সহায়তা করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মোবারক আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই জলসাতে ছিল। আমি বাসায় একাই ছিলাম। হামলাকারীদের দেখে আমি ভীত হয়ে পড়ি। তারা আমাকে পেলে মেরেই ফেলত।’
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। শহরের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন সালানা জলসা ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তারা যে অভিযোগ করছে তা ভিত্তিহীন। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কৌশল অবলস্বন করেছি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জন আটক আছেন। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’