চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩ ২০:৪৪ পিএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩ ২৩:০৮ পিএম
বিস্ফোরণের পর শনিবার সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট ঘুরে দেখেন উদ্ধারকারীর দলের সদস্যরা। ফোকাস বাংলা
শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টা। সীতাকুণ্ডের কদমরসুল বাজারের ইউসুফ সওদাগরের লাকড়ির দোকানে বসে সংবাদপত্র পড়ছিলেন শামসুল আলম। আকস্মিক এক বিস্ফোরণের শব্দে চারপাশ কেঁপে ওঠে। সংবাদপত্র পড়া অবস্থায় আচমকা বিস্ফোরণের শব্দে অন্যদের মতো শামসুল আলমও চমকে ওঠেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিস্ফোরিত একটি সিলিন্ডারের খণ্ডাংশ এসে পড়ে তার মাথায়। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শামসুল আলম। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
যে
জায়গাটিতে বসে শামসুল আলম সংবাদপত্র পড়ছিলেন, সেটি বিস্ফোরণস্থল সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট
থেকে আধা কিলোমিটারের বেশি দূরে। শ্বশুরের এমন নির্মম মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মেয়ের জামাতা
সালাউদ্দিন।
চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আমার শ্বশুর একটি দোকানে বসে পেপার পড়ছিলেন। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে আধা কিলোমিটার বেশি দূরে এই দোকানের অবস্থান। সেখান থেকে এত দূরে উড়ে এসে সিলিন্ডারের অংশটি পড়ল মাথায়। এরপর তাকে উদ্ধার করে মেডিকেল নিয়ে আসি। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা বলছেন, তিনি মারা গেছেন। এই শোক তো সইতে পারছি না।’
গত বছরের ৪ জুন সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর বিস্ফোরণে হতাহতের কথা স্মরণ করে সালাউদ্দিন বলেন, ‘বিএম ডিপোর বিস্ফোরণের শব্দও প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে শুনতে পেয়েছিলাম। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের শব্দও শুনলাম এখানে বসে। বিএম ডিপো আমার স্বজনের প্রাণ নেয়নি। কিন্তু সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের বিস্ফোরণে স্বজনের প্রাণ গেল।’
তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কিছুক্ষণ পরও বাজার থেকে একজন ফোনে জানান, আমার শ্বশুর যে দোকানে বসে পেপার পড়ছিলেন, সেই দোকানের টিনে বিস্ফোরিত একটি সিলিন্ডারের অংশ পড়েছে। টিন ভেদ করে ওই অংশটি পড়ে আমার শ্বশুরের মাথায়। এতে তিনি আহত হন। দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। তখন দ্রুত বাজারে যাই। তারপর তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি।’
এই প্রতিবেদন লেখার সময় শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত শামসুল আলমের মরদেহ মর্গে রাখা ছিল। রাত ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঁচজনের মরদেহ পৌঁছায়। আহতদের মধ্যে ২১ জনকে নিয়ে হাসপাতালে আনা হয়।
পাঁচজনের মরদেহের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ফরিদ আহমদ নামের আরও একজনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়। বাকি তিনজনের পরিচয় তখনও শনাক্ত হয়নি। ফরিদ আহমদ সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার ভগ্নিপতি আজম খান।
বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। সেখানে ওই কারখানা থেকে আসা হতাহত রোগীদের চিকিৎসাসেবা, ওষুধ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) রাজিব পালিত প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘রাত ৮টা পর্যন্ত আহত ২৩ জনকে হাসপাতাল আনা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন মৃত। তবে দগ্ধ রোগী আসেননি। আহত এসেছেন। তাদের ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’