খুলনা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৪ পিএম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:০৬ পিএম
রহিমা বেগম ও মরিয়ম মান্নান। ছবি কোলাজ
জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশিদের ফাঁসাতে মা রহিমা বেগমকে আত্মগোপনে রেখেছিলেন মরিয়ম মান্নান। এরপর সাজিয়েছিলেন অপহরণের নাটক। রহিমা বেগম অপহরণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে মরিয়ম মান্নান, তার মা রহিমা বেগম ও মামলার বাদী ছোট বোন আদুরী আক্তারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে মামলায় ফাঁসানো আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তে রহিমা বেগমকে অপহরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মরিয়ম মান্নানের নেতৃত্বে অপহরণের নাটক সাজানোর প্রমাণ মিলেছে। মূলত রহিমা বেগম অপহরণ হননি, তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। তিনি ২৮ দিন আত্মগোনে ছিলেন। এই ২৮ দিন তিনি বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করেছেন। ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাতে তিনি মহেশ্বরপাশার বাসা থেকে আত্মগোপন করার পরে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় কিছুদিন অবস্থান করার পর টপ টেনের একটি ব্যাগে কিছু কাপড় ও ওষুধ দিয়ে মরিয়ম মান্নান তাকে বান্দরবান পাঠিয়ে দেন।
তিনি বলেন, সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর তিনি চলে যান ফরিদপুর জেলা বোয়ালমারী সৈয়দ গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে। সংবাদ পেয়ে ওই বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধারের পর তিনি কোনো কথাই বলছিলেন না। অনেক চেষ্টার পর তিনি জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশীরা তাকে অপহরণ করেছে। পরে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দীর জন্য পাঠানো হলে তিনি একই রকমের মিথ্যা বক্তব্য দেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে ঘটনাস্থল মহেশ্বরপাশায় পাওয়া যায়। সুতরাং তদন্ত শেষে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতামতে শুধুমাত্র জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশিদের ফাঁসাতে মরিয়ম মান্নানের নেতৃত্বে এই অপহরণ নাটক সাজানো হয়।
২৭ আগস্ট রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করে পরিবারের সদস্যরা। ওই দিন রাতেই খুলনার দৌলতপুর থানায় মায়ের অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ আল সাদী। পরদিন সকালে রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে মামলা করেন মেয়ে আদুরী আক্তার। মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ জুয়েল ও হেলাল শরীফের নাম উল্লেখ করা হয়। ওই সময় তাদের গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।
২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে অক্ষত ও স্বাভাবিক অবস্থায় রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ। বর্তমানে রহিমা বেগম মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাসায় রয়েছেন।