যশোর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:৩৮ পিএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:২৫ পিএম
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে পাইকারি ফুলের বাজারে ফুল বিক্রি হচ্ছে। প্রবা ফটো
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী পাইকারি ফুলের বাজারে গত দুই দিনে ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার মোকামগুলোতে এই ফুল পাঠানো হয়েছে। বসন্ত উৎসব বা পয়লা ফাল্গুন এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে এসব ফুল সারা দেশেই সৌরভ ছড়াবে। এবার ভালো দাম পেয়ে খুশি ফুলচাষিরা। বিগত সময়ের ক্ষতি কাটিয়ে লাভের মুখ দেখবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে বিগত কয়েক বছর বাজার মন্দা ছিল। এবার গোলাপসহ সব ফুলের দামই বৃদ্ধি পেয়েছে। যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম জানিয়েছেন, গত দুই দিনে এই বাজার থেকে ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। সামনের অন্যান্য দিবসগুলোতে গদখালী বাজার থেকে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। গদখালী ও পানিসারা এলাকা থেকে অন্তত ৩ কোটি টাকার গোলাপ সারা দেশে পাঠানো হয়েছে। রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পাঠানো হয়েছে ১ কোটি টাকার বেশি গোলাপ।
প্রতিদিন ভোর রাত থেকেই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফুলে ভরে যায় গদখালী বাজার। দেশের বৃহত্তম ফুলের এই বাজারে বেচাকেনা চলে তিন থেকে চার ঘন্টা। গত কয়েক বছর চরম ক্ষতির মুখে পড়লেও এবার বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে চাঙা রয়েছে বাজার। চাষিরা জানিয়েছেন, এবার ফুলের ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। এতে বিগত দিনের ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
আল আমিন নামে একজন ফুল ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে গোলাপের। তাই দামও বেশি পাওয়া যায়। এখন প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা দরে। যা অন্যান্য সময় ছিল ৫ থেকে ৮ টাকা।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, রবিবার গদখালীর পাইকারি বাজারে ক্যাপ ছাড়া প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকা, ক্যাপ পরানো গোলাপ ৮ থেকে ১০ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ৭ থেকে ১২ টাকা, রজনীগন্ধা ১০ থেকে ১২ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ১৪ থেকে ২০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ৪ থেকে ৬ টাকা, জিপসি প্রতি মুঠো ৫০ টাকা ও কামিনীর পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া গাঁদা ফুল প্রতি হাজার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, এখন গাঁদা ফুলের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকলেও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই ফুলের চাহিদা বাড়বে। তখন বেড়ে যাবে দামও।
ফুলচাষি সাজেদা খাতুন বলেন, ‘বর্তমানে ফুলের বাজার বেশ ভালো যাচ্ছে। এভাবে চললে ফুল চাষে লাভ হবে।’
আজিজুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, ‘ফুল শুধু বাজারে নিয়ে বিক্রি করি না। ক্ষেত থেকে অনেকে তাজা ফুল ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। গত দুই দিনে প্রায় ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি।’
ফুলচাষি ঈসমাইল হোসেন জানান, ভালোবাসা ও বসন্ত দিবস উপলক্ষে টিউলিপ চাষ করলেও দিবস আসার আগেই সব ফুল বিক্রি হয়ে গেছে। একটি টিউলিপ ১৩০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
ভালোবেসে সম্রাট শাহজাহান গড়েছিলেন তাজমহল। আর গদখালীর পানিসারা গ্রামের শাহজাহান চাষ করেছেন লডস্টিক গোলাপ। সেই গোলাপ প্রতিটি বিক্রি করছেন ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। দীর্ঘদিন পর গোলাপের এমন দাম পেয়ে খুশি শাহজাহান। তিনি বলেন, ’ভালোবাসার গোলাপের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।’
যশোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘যশোরের গদখালীতে টিউলিপ, লিলিয়াম, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুলের চাষ হয়েছে। বিভিন্ন দিবসকেন্দ্রিক হলেও এখন সারা বছর এই এলাকায় ফুলের চাষ হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর করোনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে ফুলচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর ফুলের উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন তারা। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা তাদের ফুল চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।’