কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:০১ পিএম
ক্রেতাদের প্রতি সিলিন্ডারের জন্য গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। প্রবা ফটো
সরকার নির্ধারিত মূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে পারছেন না কেরানীগঞ্জের ক্রেতারা। প্রতি সিলিন্ডারের জন্য গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে কেনার কারণে সমন্বয় করা দামে সিলিন্ডার বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। বাড়তি দামে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।
তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। এতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
কমিশনের সর্বশেষ নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী, ১২ কেজি গ্যাসের একটি সিলিন্ডারের জন্য খুচরা পর্যায়ে গ্রাহককে দিতে হবে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। গত বৃহস্পতিবার এই দাম নির্ধারণ করা হয়।
শুভাঢ্যা এলাকার বাসিন্দা নূরজাহান বেগম বলেন, গত মাসে গ্যাস কিনেছি ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। আজকে গ্যাস কিনতে গিয়ে দেখি গ্যাস সংকট। দোকানিরা দাম চাচ্ছেন প্রতি সিলিন্ডার দুই হাজার টাকা। পরে গ্যাস না কিনে বিদ্যুতে রান্না করলাম।
একই এলাকার নির্মাণশ্রমিক জাবেদ মিয়া বলেন, আমার বাসায় গ্যাস নেই তিন দিন যাবত। গ্যাসের দাম বেড়েছে। যে দোকানেই যাই দোকানদার দাম চায় দুই হাজার টাকা। তাই মাটির চুলায় রান্না করি।
শুভাঢ্যা মদিনা নগর এলাকার গ্যাস বিক্রেতা বরিশাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ফিরোজ সরকার নির্ধারিত দামের কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ঠিকই, কিন্তু সরকার তো গ্যাস দেয় না, ডিলারদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকায় গ্যাস নিতে হয়। পাশাপাশি ট্রান্সপোর্ট ও লেবারসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। তাছাড়া গ্যাসের সংকট রয়েছে। ডিলাররা গ্যাস দিতে পারছেন না। এমন অবস্থায় সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে।
সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৫০০ টাকা আয় করে বাসায় যান মমিনুল ইসলাম। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাসায় গিয়ে দেখি গ্যাস নেই। পরে ১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে এলাকার দোকানগুলোতে গ্যাস কিনতে গিয়ে জানতে পারি, গ্যাস বিক্রি করছে দুই হাজার টাকায়। কম দামের আশায় পাশের এলাকায় গিয়েও দেখি একই চিত্র। জেদ করে গ্যাস না কিনে বাসায় চলে আসি।’
বাড়তি দামে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা গেছে আগানগর এলাকায়ও। এই এলাকার দুটি দোকান ঘুরে দুটিতেই ১ হাজার ৮৫০ টাকায় গ্যাস বিক্রি করতে দেখা গেছে। এই এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার এই এলাকায় ১ হাজার ৯০০ টাকা দরেও ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে।
খোলামুড়া এলাকায় একটি দোকান থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন ইব্রাহীম হোসেন।
সরকার নির্ধারিত দামটি জানা থাকার পরও বেশি দামে সিলিন্ডার কেনার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘আমার তো উপায় নেই। এর চেয়ে কম দামে কেউ বিক্রি করছেন না। আমরা জিম্মি অবস্থায় আছি।’
কেরানীগঞ্জের গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নূর এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. রুহুল আমিন বলেন, আমাদেরকে গ্যাস কিনতে হয় ১৬০০ টাকায়। এর মধ্যে গ্যাসের সংকট রয়েছে। কোম্পানির কাছে ৫০০ বোতল গ্যাস চাইলে ১০০ বোতল গ্যাস দিতে পারে না। গ্যাস পাঠাতেও সময় নেয় দুই থেকে তিন দিন। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যায়। তাই আমরা চাইলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করতে পারছি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফয়সাল বিন করিম জানান, এ বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। অতিরিক্ত দামে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিইআরসি নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দাম দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ বলছেন, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম।
তিনি জানান, ‘গ্রাহকের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নিলে আইন অনুযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে। কেউ নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে গ্যাস কিনলে সরাসরি বিইআরসিতে অথবা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া আমাদের কাছে অভিযোগ করলেও আমরা বিষয়টি তদারকি করতে পারব।’