× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাঁকো সরিয়ে রাস্তা, নদী মারার ফন্দি

মেরিনা লাভলী, রংপুর

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৩৫ পিএম

রংপুরে আলাইকুমারী নদীতে সাঁকো তুলে যাতায়াতের জন্য মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবা ফটো

রংপুরে আলাইকুমারী নদীতে সাঁকো তুলে যাতায়াতের জন্য মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবা ফটো

রংপুরের আলাইকুমারী নদী বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। পীরগাছা উপজেলার কল্যানী ইউনিয়নের স্বচাষ এলাকায় নদীর পুরোনো একটি সাঁকো সরিয়ে করা হয়েছে এই রাস্তা। এতে স্থানীয়দের আপাতত সুবিধা হলেও দখল-দূষণে মৃতপ্রায় নদীটি স্থায়ীভাবে মরে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।

উচ্চ আদালতের রায়ে নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও সেতু না করে নদীর ওপর রাস্তা নির্মাণ করা আইনের লঙ্ঘনও বলছেন তারা।

শিগগিরই নদীতে করা রাস্তা ভেঙে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সরকারি কর্মসূচি প্রকল্পের শ্রমিকদের দিয়ে কল্যানী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এই রাস্তা তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ নদী-এলাকার অনেক বাসিন্দার।

তবে ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম বলেন, আলু উত্তোলনের মৌসুমের কারণে ভাঙা সাঁকোটি সরিয়ে কৃষকদের সুবিধার জন্য নদীর ওপর মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে মাটি পরীক্ষাও হয়ে গেছে। শিগগিরই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

নদী সংশ্লিষ্টরা জানান, ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্যের আলাইকুমারী নদী পীরগাছা উপজেলার কল্যানী ইউনিয়নের বড়হাজরা এলাকা থেকে প্রবাহিত হয়ে রংপুর-পাওটানা রাস্তার বড়দরগাহ, মনতার বাজার, সুন্দর বাজার ও দামুর চাকলা বাজার অতিক্রম করে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে পীরগাছা সদর ইউনিয়নের ঘাঘট নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। কল্যানী ইউনিয়নের স্বচাষ ও ইন্ডিয়াপাড়াকে আলাদা করেছে নদীটি।

স্থানীয়রা জানান, স্বচাষ ও আশপাশের ৯ গ্রামের মানুষের কল্যানী ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াতের একমাত্র পথ ছিল আলাইকুমারী নদীর ওই সাঁকো। কয়েক বছর আগে সেখানকার জরাজীর্ণ সেতু ভেঙে গেলে সাঁকো দেন স্থানীয়রা। সেটি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, কল্যানী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, স্কুল-কলেজ, নব্দীগঞ্জ হাট-বাজারে যাতায়াত করতেন এলাকার মানুষ। সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় বড়দরগা, তালতলা, দেউতি, হাউদারপাড়, সরেয়ারতল, মহিন্দ্রা, জোড়ইন্দ্রা, নয়া নদী ও স্বচাষ গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বিপদে পড়েছিলেন।

বিভিন্ন সময় আলাইকুমারী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। দু’সপ্তাহ আগে কল্যানী ইউনিয়ন পরিষদের অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে আলাইকুমারী নদীর ওপর সাঁকো সরিয়ে পুরো নদীর ওপর মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়।

স্থানীয় সচেতনরা জানান, কৃষকদের আলু হাটবাজারে বিক্রি ও নব্দীগঞ্জের হিমাগারে নিয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে ইউপি চেয়ারম্যান নদীর গতিপথ বন্ধ করে মাটির সড়ক নির্মাণ করেছেন। এতে সাময়িকভাবে মানুষের উপকার হলেও দখল ও পানির অভাবে জীর্ণশীর্ণ নদীটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু দিন আগেও স্বচাষ এলাকায় আলাইকুমারী নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো ছিল। এখন তা নেই। ৩০ মিটার প্রস্থের নদীর বুক ভরাট করে মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সেখান দিয়ে যাতায়াত করছে রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও কৃষিপণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত পিকআপ। নদী ভরাট করে নির্মিত রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল কিংবা পিকআপ চলাচল করলেই বাতাসে উড়ছে ধুলা। আলাইকুমারী নদীটি দখলের কারণে সরু হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে তা খালে পরিণত হয়েছে। এর ওপর পানির প্রবাহ না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে এটি মরা খালে পরিণত হয়।

দেখা গেছে, স্থানীয় কৃষকরা এ নদীর ধারে ধান, পেঁয়াজ, রসুন, নেপিয়ার ঘাসসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করেছেন। নদী ভরাট করে নির্মাণ করা রাস্তা দিয়ে নাতিকে নিয়ে সাইকেলে করে বাড়িতে যাচ্ছিলেন স্বচাষ এলাকার নুরু মিয়া (৬৮)।

তিনি বলেন, ‘আলাইকুমারী নদীত আগোত পাকা বিরিজ আছিল। তিন বছর হইল বিরিজ ভাঙ্গি গেইছে। ম্যালা দিন থ্যাকি বিরিজ করি দিবার জন্তে হামরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানোক কবার নাগছি। কিন্তু চেয়ারম্যান হামার কতা শোনে না। একবার বিরিজ কইরব্যার জন্তে রড-বালা আনিল। পরে কেনবা নিয়া গেইল। এতদিন হামরা বাঁশের সেতু দিয়া নদী পার হইছিনু। অ্যালা নদীত মাটি ভরিয়া রাস্তা বানাইছে চেয়ারম্যান।’

আলাইকুমারী নদীর পাশে বসে থাকা শংকর রায় (২৮) বলেন, সরকারি ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিকদের দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নদীর বুকে মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। আগামী বর্ষায় এই রাস্তাটি থাকলে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে পুরো এলাকার জমিগুলো তলিয়ে যাবে।

 রংপুর বিভাগীয় নদী রক্ষা কমিটির সদস্য, রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে নদীর ওপর রাস্তা নির্মাণ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটি উচ্চ আদালতের আদেশেরও লঙ্ঘন।

পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুল আরেফিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ছোট-বড় সব নদীতে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সেতু ছাড়া নদীর ওপর মাটির রাস্তা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা