দিনাজপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৫৮ পিএম
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:১৭ পিএম
লিচুর গাছে গাছে কচি পাতা। প্রবা ফটো
নির্ধারিত সময়ের আগেই আম গাছে উঁকি দিচ্ছে মুকুল। তবে লিচু গাছে মুকুলের পরিবর্তে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে তামাটে কচি পাতা। এ পরিস্থিতিতে হতাশ লিচুর জেলা দিনাজপুরের বাগান মালিক ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীরা।
উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ ও কৃষিবিদদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তের প্রভাব পড়েছে দিনাজপুরের লিচু বাগানে। ‘ফ্লায়ারিংয়ের পরিবর্তে ফ্লাশিং’ হয়েছে গাছগুলোতে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, জেলায় ছোট-বড় নিয়ে তিন হাজার ১২৮টির বেশি লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে রয়েছে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার গাছ। লিচুর জন্য বিখ্যাত এ জেলায় প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে লিচু চাষের জমির পরিমাণ। দেশব্যাপী দিনাজপুরের লিচুর কদরও রয়েছে আলাদা। বেদানা, চায়না থ্রি, চায়না টু, বোম্বাই, মাদ্রাজি, হাড়িয়া ও কাঁঠালি লিচু চাষ হয় এখানে।
প্রকৃতির রসগোল্লা খ্যাত এ জেলার সুস্বাদু লিচুর খ্যাতি দেশজুড়ে। কিন্তু এবার লিচু ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বাগান মালিক, কৃষিবিদ ও উদ্ভিদবিদসহ অনেকেই। তাদের মতে, এবার লিচু ফলন বিপর্যয়ের আশংকাই রয়েছে বেশি। কারণ, লিচু গাছে মুকুলের পরিবর্তে তামাটে রঙের কচি পাতা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদ্য অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ জানান, গত বছর অক্টোবর মাসে অসময়ে বৃষ্টিপাতে ক্ষতি হয়েছে। মাটিতে পর্যাপ্ত খাদ্য, বেশি রস থাকলে ফ্লাওয়ারিং না হয়ে ফ্লাশিং হয়। আর ফ্লাশিং হলে ফ্লাওয়ারিং হবে না কখনোই। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কাই থাকে বেশি।
তিনি বলেন, 'মাঘ মাসের শুরু থেকে লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। ফাল্গুনের মাঝামাঝি বাগানগুলোতে লিচুর মুকুল থেকে কুঁড়ি আসা শুরু হয়। আর চৈত্রের শুরুতে কুঁড়ি থেকে ফুটবে গুটি লিচু। সবুজ গুটি থেকে থোকা থোকা বৈশাখের মাঝামাঝি টকটকে লাল রঙে রাঙাবে। জ্যৈষ্ঠ মধুমাসে গাছগুলোতে ঝুলে থাকবে থোকায় থোকায় লিচু। এবার যেহেতু আগেই ফ্লাশিং হয়েছে, তাই ফ্লাওয়ারিং সম্ভাবনা খুবই কম।'
দিনাজপুরের লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত বিরল উপজেলার মাধববাটী। এই গ্রামের চারিদিকে যেখানেই চোখ যায় শুধু লিচুর বাগান। লিচু গাছে এসময় মুকুল আসার কথা। কিন্তু গাছগুলো ভরে আছে লালচে ও তামাটে রঙের কচি পাতায়।
বাগানমালিক মতিউর রহমান বলেন, 'বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মুকুলের পরিবর্তে গাছে নতুন পাতা বের হচ্ছে। এ জন্য দূর দূরান্ত থেকে বাগান কিনতে আসা ব্যবসায়ীরা লিচু গাছের এই অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।'
উদ্ভিদবিদ মোসাদ্দেক হোসেন জানান, লিচুচাষিদের জন্য বিষয়টি দুঃসংবাদ। দিনাজপুরে লিচু গাছে নতুন মুকুলের পরিবর্তে নতুন পাতা। এটি আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সুস্পষ্ট। পুষ্পদণ্ড বা মঞ্জরিদণ্ড কচি পাতা থেকে উদিত হওয়ার সক্ষমতা থাকে না। কচি পাতা বের হওয়ার জন্য দায়ী অসময়ে বৃষ্টিপাত; বায়ুপ্রবাহ ও গ্রীষ্ম অথবা শীতের মিশ্রণ। তাপমাত্রার তারতম্য উদ্ভিদের বায়োক্লোক বা জৈব ঘড়ি ব্যহত হয়। উদ্ভিদের স্বাভাবিক শরীর বৃত্তিয় ক্রিয়ায় প্রভাবিত হওয়ায় পুস্প মঞ্জুরি দণ্ড বের হতে পারে না। এ সময় উদ্ভিদ নতুন পাতা গজিয়ে ফেলে। নতুন পাতা বের হলে আর ফুল আসেনা। লিচুচাষিদের জন্য বিষয়টি দুসংবাদ।'
এদিকে দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, গত বছরের অক্টোবরে জেলায় ৭০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত। এ বৃষ্টির কারণে লিচুতে এমন বিপর্যয় হতে পারে।