চাঁদপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:২৮ পিএম
চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীর তীরে ভাসছে তিন শিক্ষাতরী। নদীর পাড়ে অবস্থান নেওয়া এসব তরীতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মূলত শিক্ষার্থীদের কাছে বিজ্ঞান ও গণিতকে আরও সহজ করে তুলে ধরা এবং তাদের মূল্যবোধ গঠনই এই উদ্যোগের লক্ষ্য। ব্র্যাকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এর আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। গত কয়েকদিন ধরে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছুটে যাচ্ছে এসব তরীতে।
গত শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই তিন শিক্ষাতরীর উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ব্র্যাকের এমন উদ্যোগ। নতুন শিক্ষাক্রমও এমন। আমরা হাতে কলমে শেখানোর চেষ্টা করছি।’
সুনামগঞ্জ থেকে যাত্রা করা এসব শিক্ষাতরী এখন চাঁদপুরে অবস্থান করছে। এখানে সেগুলো পৃথক দুইটি স্থানে থাকবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন। তারপর লক্ষীপুরসহ পর্যায়ক্রমে দেশের বেশ কয়েকটি জেলার তীরে ভিড়বে।
নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি এসব শিক্ষাতরীতে গণিত ও বিজ্ঞানের ব্যবহারিক কার্যক্রম দেখে খুশি শিক্ষার্থীরা। চাঁদপুর আল আমিন একাডেমির শিক্ষার্থী এবায়েদুর রহমান ও তানিয়া আক্তারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, এগুলোতে খেলার ছলে মূল্যবোধ শেখানো হয়। শুধু প্রদর্শনী নয়, প্রতিটি তরীতে দুই জন শিক্ষক রয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
প্রতিটি শিক্ষাতরীতে দুইজন করে মোট ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। এগুলো প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত। কেউ অভিভাবক, আবার কেউ শিক্ষকদের সঙ্গে দলবেঁধে নিয়মিত আসছে। তবে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাড়াও নদীর পাড়ে বা নদীতে ভাসমান জনগোষ্ঠীর কিছু শিশু-কিশোরেরও দেখা মিলেছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকারা বলছেন, চাঁদপুরে শিক্ষাতরীর স্বার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন তারা। কারণ কখনও স্কুলে যায়নি, এমন কিছু শিশু-কিশোর বিজ্ঞান, গণিত, মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো দেখে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে। শিক্ষার্থী বেশি হলে ১৫/২০ জন করে ব্যাচ ভিত্তিক ধারণা দেওয়া হয়।
তিনটি শিক্ষাতরীতে যোগফল, ভাগ, গুণ, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, পাইয়ের পরিমাণ, বৃত্তের ক্ষেত্রফল, ভারসাম্যের খেলা, ত্রিভুজের তিন কোণ, মিসিং স্কয়ার, ম্যাজিক স্কয়ার, ভগ্নাংশ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া হয়েছে।
মূল্যবোধ তরীতে রয়েছে শিক্ষণীয় দেয়ালচিত্র, বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে সহমর্মিতার চর্চা এবং শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ, জেন্ডার, পরিবেশ, মানসিক সুস্থতা বিষয়ক পাজল, ফ্ল্যাশ কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান, মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে মূল্যবোধ সংক্রান্ত গল্প উপস্থাপন, মূল্যবোধের ওপর তৈরি বিভিন্ন গল্পের বই পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কর্নার।
বিজ্ঞানতরীগুলোতে আরও রয়েছে পরীক্ষণ ও খেলার মাধ্যমে বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্বের প্রয়োগ, বাস্তব উপকরণ পর্যবেক্ষণ ও হাতে-কলমের চর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বের সমাধান, বিভিন্ন ধারণা এবং বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে শিক্ষণীয় দেয়াল চিত্র, পেরিস্কোপের সাহায্যে দৃষ্টিসীমার বাইরের বস্তু দেখা, ক্যালাইডোস্কোপ ও ট্যানগ্রামের মাধ্যমে মজার মজার নকশা তৈরির সুযোগ।
প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রদীপ কুমার রায় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম ফের সুনামগঞ্জে গিয়ে শেষ হবে। ইতোমধ্যেই কিশোরগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় এর কার্যক্রম শেষ হয়েছে। চাঁদপুর থেকে লক্ষীপুর, ভোলা, ঝালকাঠি, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ হয়ে আবারও সুনামগঞ্জের পথে যাত্রা করবে এসব শিক্ষাতরী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের পরিচালক সাফি রহমান খান, প্রোগ্রাম হেড প্রপুল্য চন্দ্র বর্মণ ও প্রোগ্রাম অর্গানাইজার সোহেল মোল্লা প্রমুখ।