বান্দরবান প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:০৯ পিএম
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:১৭ পিএম
রেংমিটচ্য ভাষার প্রথম অভিধান ‘মিটচ্য তখক’। প্রবা ফটো
‘ম্রো’ পার্বত্য অঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। তাদের একটি ভাষা ‘রেংমিটচ্য’। ম্রোদের মধ্যে প্রচলিত মূল ভাষার বাইরের এ ভাষা বিলুপ্তপ্রায়। কারণ মাত্রই ছয়জন রেংমিটচ্য ভাষায় কথা বলেন এখন।
ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে রেংমিটচ্য ভাষার প্রথম অভিধান গ্রন্থনা করেছেন ইয়াংঙান ম্রো। ম্রো বর্ণমালায় লেখা এই অভিধানের নাম ‘মিটচ্য তখক’। প্রায় ১০ বছরের প্রচেষ্টায় অভিধানটি লেখা শেষ করার কথা জানিয়েছেন লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো। তিনি ম্রো ভাষায় প্রথম বইয়েরও লেখক।
সোমবার (৩০জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা শহরে শৈ শৈ ক্যাফে রেস্তোরাঁ ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
যে ছয়জন রেংমিটচ্য ভাষায় কথা বলেন তারা হলেন- নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চাইন প্রা মৌজার কাইংওয়াই পাড়ায় মাংপুন ম্রো, কুন রাও ম্রো, মাংওয়ই ম্রো ও মাংপুন ম্রো। এ ছাড়া, মেনচিং পাড়ার থোয়াইংলক ম্রো এবং ওয়াই বট পাড়ার রেংপুন ম্রো। তাদের মধ্যে দুজন নারী ও চারজন পুরুষ। রেংমিটচ্য ভাষার অভিধানে প্রচ্ছদে এই জীবিত ছয়জনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
বইটির লেখক ইয়াংঙান ম্রো বলেন, ‘২০১৪ সালেও রেংমিটচ্য ভাষার ৩২ জন ছিলেন। ২০২৩ সালে তা কমে মাত্র ছয়জন হয়েছে। বাকিরা মারা গেছে। যারা বেঁচে আছেন তাদের সবার বয়স গড়ে ৬০ বছরের উপরে। তারা মারা গেলে মানব সভ্যতা থেকে একটি ভাষার পরিসমাপ্তি ঘটবে।’
প্রচ্ছদে বাবার ছবি দেখে খুবই খুশি মাংপুন ম্রোর ছেলে সিংরা ম্রো। বললেন, ‘এটা খুব আনন্দের ও গর্বের ব্যাপার। বইটি আমাদের ভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।’
অভিধানটিতে শব্দ আছে প্রায় ৩৪০০। ম্রো ভাষার পাশাপাশি শব্দগুলোর বাংলা অনুবাদও আছে। কৃষি, সংস্কৃতি, ধর্ম, খাবার, জিনিসপত্র, ফলমূলসহ বিভিন্ন বিষয়ে দৈনন্দিন জীবনে রেংমিটচ্য মানুষদের ব্যবহৃত শব্দগুলো তুলে এনেছেন অভিধানকার ইয়াংঙান ম্রো। পাশাপাশি আছে সাধারণ আলাপ-আলোচনায় ব্যবহৃত কিছু কথোপকথনও।
অভিধানটি প্রকাশিত হয়েছে বান্দরবানের বনতুলি প্রিন্টার্স থেকে। নিজের টাকা খরচ করেই এটি প্রকাশ করেছেন ইয়াংঙান ম্রো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন ইয়াংঙান ম্রো। এরপর থেকে গবেষণা ও লেখালেখিকেই মূল কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।