সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৩৭ পিএম
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৫২ পিএম
নিজের নির্মাণ করা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভ্যানচালক আব্দুল গফুর। প্রবা ফটো
নিজের জমানো টাকায় রাস্তা নির্মাণ করে সুনাম কুড়িয়েছেন এক ভ্যানচালক। এমনকি রাস্তার জন্য বরাদ্দ জায়গাটিও তার নিজস্ব। ৬০ বছর বয়সী ভ্যানচালক আব্দুল গফুর সিরাজগঞ্জ তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের হামকুড়িয়া গ্রামের খাঁন পাড়ার বাসিন্দা।
স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে দীর্ঘ সময় রাস্তা নির্মাণ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে আব্দুল গফুর ২০০ ফুট রাস্তাটি নিজেই নির্মাণ করেন। রাস্তা নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। এমন অনন্য নজির স্থাপন করায় খুশি এলাকাবাসী।
ব্যক্তি জীবনে গফুর বিবাহিত এবং চার সন্তানের জনক। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সবাই বিবাহিত এবং প্রত্যেকেই আলাদা সংসারে থাকেন। ভ্যানই গফুরের উপার্জনের একমাত্র উপায়।
খাঁন পাড়ার আবু মোসাদের বলেন, 'আমাদের এখানে রাস্তার বেহাল দশ ছিল। আমরা চেষ্টা করেও এটি তৈরি করতে পারিনি। আব্দুল গফুরের একক প্রচেষ্টায় এটি নির্মাণ করে দেখিয়েছেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।'
আরেক এলাকাবাসী মরিয়ম খাতুন জানান, চলাচলের অযোগ্য ছিল রাস্তাটি। বৃষ্টি হলে চলাচলের উপায় থাকতো না। কেউ উদ্যোগ নেয়নি। ভ্যানচালক হয়ে তার এমন কাজ সত্যি অভিভূত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভ্যানচালক আব্দুল গফুর নিজের বাড়ি হতে প্রায় ২০০ ফুট রাস্তা নির্মাণ করেছেন। উচু নিচু ভাঙ্গাচোরা রাস্তার উপর দিয়ে মাটি ফেলে তা সমান করেছেন। এতে এলাকার প্রায় ৩০০ পরিবার সুবিধা পাবে। ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেল ও গাড়ি চলাচল করতে পারবে অনায়াসে। বিশেষ করে এই রাস্তা ধরেই বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথ।
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে গফুর বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমাদের এই পাড়াতে যাওয়ার জন্য কোনো রাস্তা ছিল না। রাস্তার জন্য অনেকের কাছে গিয়েছি কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। পাড়ার লোকজন ও স্কুলগামী ছেলে মেয়েদের কষ্ট দেখে ব্যথিত হতাম। আমার সামর্থ্য নাই, বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি টাকা জমিয়ে রাস্তার কাজ ধরব। সেজন্য অল্প অল্প করে টাকা জমাতে থাকি। এই রাস্তা নির্মাণের জন্য কোনো সরকারি জায়গা না থাকায় আমার জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছি।’
হামকুড়িয়া পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘গফুর ভাই আমার প্রতিবেশী। তার মন অনেক বড়। এলাকাবাসী সমাজসেবক হিসাবে তার নাম মনের মণিকোঠায় লিখে রাখবে।’
মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান বলেন, ‘তিনি নিজের বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। আমরা নতুন করে পাশ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেব। রাস্তার কাজ করার জন্য আমরা আগেই চিন্তা করেছিলাম।’