গাজীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৩৬ পিএম
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৫৮ পিএম
দুই মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা, বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। প্রবা ফটো
কেক-পেটিস খেয়ে গাজীপুরে দুই শিশু বোনের মৃত্যুর পর বাবা-মা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। দুধের সন্তানকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। হতবিহ্বল বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে, কখনও বা হাঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। সন্তান হারানোর শোকে কখনও দেখা যাচ্ছে হাসপাতালের বারান্দায়, কখনও মর্গের সামনে ছুটছেন তারা।
রবিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে গাজীপুর মহানগরীর সালনা ইসপা গেট এলাকা এরশাদ হোসেনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সে বাসায় ভাড়া থাকেন আশরাফুল ইসলাম ও সফুরা খাতুন দম্পতি।
সকালে আশরাফুল বড় মেয়ে ৬ বছরের আশা মনি ও ছোট মেয়ে দেড় বছরের আলিফা আক্তারকে খাওয়ার জন্য কেক ও পেটিস কিনে দেন। সেটি খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে দুই মেয়ে। দ্রুত তাদের হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
আশরাফুল ইসলামের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার টিকারচর গ্রামে।
সকালে দুই মেয়েকে বাড়িতে রেখে কারখানায় যান মা ছফুরা খাতুন। একটু পরেই খবর পান দোকানের কেক ও পেটিস খেয়ে অসুস্থ তার দুই মেয়ে। দ্রুত ছুটে চলে আসেন বাসায়। এসে দেখতে পান বড় মেয়ে বমি করছে। ছোট মেয়ে কান্না করছে। দ্রুত দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন মা। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক জানায় দুজনই মারা গেছে। শোনারা পর থেকেই বাকরুদ্ধ বাবা-মা।
বিলাপ করতে করতে ছফুরা খাতুন বলেন, ‘বড় মেয়ের ঠান্ডা লাগায় অফিসে যাওয়ার আগে ঠান্ডার সিরাপ খাইয়ে গেলাম। পরে শুনতে পাই কেক খেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছে। হাসপাতালে আনার পরেও আমার মেয়েরা জীবিত ছিল, কিন্তু ডাক্তাররা বলছে মারা গেছে।’
দুই মেয়ের বাবা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ইপসা গেট এলাকায় সাইফুলের দোকান থেকে পেটিস ও কেক কিনে দিয়েছিলাম তাদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় মেয়ে আশা মনি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তারপর ছোট মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুজনকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। আমরাও তো কেক খেয়েছিলাম, অন্য বাচ্চারাও খেয়েছিল, তাদের তো কিছু হলো না। আমার মেয়েরা কেন মারা গেল।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি।
আশরাফুলের কিনে দেওয়া কেক-পেটিস খেয়েছিল ১২ বছর বয়সী শিশু আলপনাও। সে বলে, ‘কেক আমিও খেয়েছি, কিন্তু আমার কিছু হয়নি। কেক খাওয়ার পর আশা মনি বমি করে আর আলিফা চিৎকার শুরু করে।’
শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহমুদা বলেন, ‘শিশু দুটিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
কেক খেয়ে মৃত শিশুদের ফুফাত ভাই ৬ মাস বয়সি সিয়ামও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে যায় এবং শিশুদের পিতামাতা ও স্বজনদের সাথে কথা বলে। ধারণা করা হচ্ছে, বাচ্চারা খেলতে গিয়ে কেকের সাথে অন্য কিছু খেতে পারে। শিশু দুটির লাশ মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
বাড়ির মালিক এরশাদ হোসেন ও শিশুদের স্বজনরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আশরাফুল পরিবার নিয়ে সালনা এলাকায় বসবাস করেন। তার স্ত্রী স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। আশরাফুলের চাকরি নেই কয়েকমাস ধরে, তিনি বাসাতেই থাকেন। সামনের মাস থেকে স্ত্রীর অফিসেই যোগদানের কথা রয়েছে তার। ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন তার নানি মনোয়ারা বেগম।