নেত্রকোণা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:৩১ এএম
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৩৬ এএম
মদন উপজেলা প্রেস ক্লাবের সামনে অবাধে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। প্রবা ফটো
নেত্রকোণার মদন পৌরসভা। দ্বিতীয় শ্রেণির এ পৌরসভার বয়স দুই যুগের কাছাকাছি। এত সময় পেয়েও পৌরসভাটি এলাকার তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি।
এ শহরে বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত নয়। প্রায় প্রতিটি রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা একেবারে ভঙ্গুর। বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ভাঙা ও কাঁচা। আর্সেনিকের ঝুঁকি থাকলেও নলকূপের পানি একমাত্র ভরসা।
নাগরিকরা নিয়মিত কর পরিশোধ করলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় বিক্ষুব্ধ। পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এটি শুধু নামেই পৌরসভা, কাজে লবডঙ্কা।
পৌরসভার তথ্যমতে, ২০০০ সালের ১ অক্টোবর ১০ দশমিক ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভার আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়। ২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় প্রথম নির্বাচন। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হয় পৌরসভাটি। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পৌর এলাকার জনসংখ্যা ১৭ হাজার ৩৮৮। তবে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার। ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে ৯৬ জনবল থাকার কথা থাকলেও মদন পৌরসভায় সব মিলিয়ে জনবল রয়েছে মাত্র ১৫ জন।
তিন তলাবিশিষ্ট মদন পৌরভবনের সামনে ছোট সড়ক। তারপর মগড়া নদী। ভবনের এক পাশে জলাশয়। আরেক পাশে কৃষিজমি। সড়কের পাশে কাঠসহ নানান জিনিসপত্র পড়ে আছে। ভবনে নেই কোনো সেবাগ্রহীতা বা কর্মকর্তার আনাগোনা। ভবন থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে সরকারি খাদ্যগুদাম। ওই গুদামের সামনের প্রধান সড়কের পাশে বড় ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধে মানুষ নাকেমুখে কাপড় চেপে যাতায়াত করছে।
এ ছাড়া মদন প্রেস ক্লাব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের পাশে ময়লার স্তূপ পড়ে আছে। মদন শহীদ স্মরণিকা বালিকা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। পৌরসভার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যেখানে খুশি সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য সরবরাহের জন্য একটি ট্রাক থাকলেও তা কাজে আসছে না।
পৌরশহরে ইজিবাইক, অটোরিকশা, সিএনজির জন্য কোনো নির্ধারিত স্ট্যান্ড না থাকায় মোড়ে মোড়ে রাস্তার ওপর স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। স্ট্যান্ড না থাকলেও পৌরসভার রসিদের মাধ্যমে যানবাহন চালকদের কাছ থেকে টোল আদায় করতে দেখা যায়। রাস্তার ওপর গাড়ি রাখায় সারাক্ষণ পৌরসদরে যানজট লেগে থাকে।
পৌরশহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোহাগ আহমেদ জানান, পৌরসভার পক্ষ থেকে ময়লা রাখার কোনো নির্ধারিত জায়গা না দেওয়ায় আমাদের বাসার সামনের খেলার মাঠ ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধের কারণে নিজ বাসায় বসবাস করা এখন কঠিন হচ্ছে।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আল আমিন, সাইদুর মিয়াসহ কয়েকজন জানান, মদন পৌরসভা আর ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। বেশি খাজনা দিয়েও সেবার বদলে ভোগান্তি পোহাচ্ছি। ভোটের সময় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দেবেন কিন্তু কখনও বাস্তবায়ন করবেন না।
মদন পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম সাইফ পৌরবাসীর দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ময়লা রাখার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করতে না পারায় ডাস্টবিন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। পৌরসভায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে একটি প্রকল্পের বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।