× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর

সম্ভাবনার হাতছানি, আছে চ্যালেঞ্জও

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম ও নুপা আলম, কক্সবাজার

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:০০ পিএম

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:০১ পিএম

সম্ভাবনার হাতছানি, আছে চ্যালেঞ্জও

ইউরোপ, আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে হলে এখন সিঙ্গাপুর অথবা কলম্বো পোর্ট, অন্যথায় মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দর হয়ে পাঠাতে হয়। গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় ছোট জাহাজে প্রথমে এসব বন্দরে পাঠানো হয়। এরপর সেখান থেকে বড় জাহাজযোগে পৌঁছানো হয় গন্তব্যে। একই অবস্থা আমদানির ক্ষেত্রেও। এতে একদিকে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে বেশি সময় লাগছে, অন্যদিকে একটি কন্টেইনার একাধিকবার হ্যান্ডেলিংয়ের কারণে বাড়তি পরিবহন ব্যয় গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তবে এ দুর্ভোগ অচিরেই কেটে যাচ্ছে বলে সুখবর দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তারা বলছে, মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে ট্রানজিট ভোগান্তি ছাড়াই রপ্তানি পণ্য নির্ধারিত গন্তব্যে পাঠাতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। আমদানি পণ্যও সরাসরি চলে আসবে মাতারবাড়ীতে। এ অঞ্চলের ট্রানশিপমেন্ট হাব হয়ে উঠবে এই গভীর সমুদ্রবন্দর। 

বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘খুব শিগগিরই মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে। বন্দরটি চালু হলে ১৬ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। এসব জাহাজে আট হাজার টিইইউস কন্টেইনার (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার) পরিবহন করা যায়। এতে আমদানি-রপ্তানিকারকরা লাভবান হবেন। তখন পণ্য পরিবহন খরচ অনেক কমে যাবে।’ 



চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে নির্মীয়মাণ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের তফাত কীএমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে এখন সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টিইইউস কন্টেইনার ধারণক্ষমতার ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। আর মাতারবাড়ীতে ভিড়তে পারবে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ।’ 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির ড্রয়িং ডিজাইন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে একটি ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ করা হবে। থাকছে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কন্টেইনার জাহাজ বার্থিং জেটি। নির্মাণ করা হবে ৩৫০ মিটার চওড়া এবং ১৬ মিটার গভীরতাবিশিষ্ট ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেল। উত্তর দিকে ২ হাজার ১৫০ মিটার এবং দক্ষিণ দিকে ৬৭০ মিটার লম্বা ঢেউনিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। তিনটি টাগবোট, একটি পাইলট বোট এবং একটি সার্ভে বোটসহ কার্গো হ্যান্ডেলিং ইকুইপমেন্ট টিওএস অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম কেনা হবে। এ ছাড়া জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।

এসব কাজের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে উত্তর দিকে ২ হাজার ১৫০ মিটার ঢেউনিরোধক বাঁধের ৩৯৭ মিটার নির্মাণ করা হয়েছে। অ্যাপ্রোচ চ্যানেল নির্মাণের কাজও শেষের দিকে। এর বাইরে প্যাকেজ-১ (সিভিল ওয়ার্কস ফর পোর্ট কনস্ট্রাকশন), প্যাকেজ-২এ (কার্গো হ্যান্ডেলিং ইকুইপমেন্ট টিওএস অ্যান্ড সিকিউরিটি সিসটেম) এবং প্যাকেজ-২বি (টাগ বোট, সার্ভে বোট, পাইলট বোট অ্যান্ড ভিটিএমএস) দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-২এ-তে একটি দরপত্র জমা পড়েছে। প্যাকেজ-২বি-তে কেউ দরপত্র জমা দেননি। ওই প্যাকেজে এখন পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। 

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে এখনকার চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পরিবহন খরচ কমে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হলে ট্রানজিট নিতে হবে না। তাই পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে তখন সময় এবং পরিবহন ব্যয় দুটোই কমবে। প্রতিটি কন্টেইনারের পেছনে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমবে। তবে বন্দরটি চালু রাখতে কর্তৃপক্ষকে শুরুর দিকে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। ফলে বিষয়গুলো কীভাবে হ্যান্ডেল করা হবে, সেটি নিয়ে এখনই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, একটি বড় জাহাজ (আট হাজার টিইইউস ধারণক্ষমতার) একই পরিমাণ রপ্তানি পণ্য না পেলে মাতারবাড়ীতে সরাসরি আসবে না। যদি আমদানি পণ্য নিয়ে আসেও ওই পরিমাণ রপ্তানি পণ্য না পেলে জাহাজটি খালি যেতে হবে। এতে পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। বন্দর সচল রাখতে হলে একটি জাহাজের বিপরীতে ১৬ হাজার টিইইউস কন্টেইনার আমদানি-রপ্তানি পণ্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মাতারবাড়ীতে সপ্তাহে একটি জাহাজ আসবে না। একটি জাহাজ এলে বন্দর চলবে না। একই সময়ে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে একাধিক জাহাজ আসবে।

ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়া থেকে একটি জাহাজ এলে সেটির জন্য আট হাজার টিইইউস কন্টেইনার করে পণ্য জেনারেট করতে হবে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে আসা জাহাজের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে। এই পরিমাণ পণ্য জেনারেট করতে না পারলে জাহাজ আসতে চাইবে না। 

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মামুনুর রশিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভাড়া কমবে এই কারণে যে, হ্যান্ডেলিংটা কম হবে। এখন অন্য মাদার ভেসেল সিঙ্গাপুর অথবা কলম্বোতে মাল নিয়ে আসে। তারা সেখানে কন্টেইনার নামিয়ে দেয়। এরপর সেখান থেকে ফিডার জাহাজে লোড হয়। এরপর ওই জাহাজে করে সেগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হলে বড় জাহাজগুলো সরাসরি সেখানে আসবে। মাঝখানে সিঙ্গাপুর অথবা কলম্বো বন্দরে এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে লোড-আনলোড করতে হবে না। এতে সময় এবং হ্যান্ডেলিং ব্যয় কমবে। এখন একটি কন্টেইনারের পেছনে যে পরিমাণ খরচ পড়ে, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে তখন অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম খরচ হবে।’ 

তিনি বলেন, একটি আট হাজার টিইইউস জাহাজ এলে সেটি কীভাবে হ্যান্ডেল করা হবে? এই বিশাল পরিমাণ কার্গো কীভাবে মাতারবাড়ী যাবে। সড়কপথে কার্গো নিয়ে জাহাজগুলোকে ফিডব্যাক দেওয়া সম্ভব না। ওখানে ব্যাকআপ সুবিধা লাগবে। পায়রা থেকে ছোট জাহাজে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছোট জাহাজে কন্টেইনারগুলো সেখানে রাখতে হবে। আমদানি পণ্যভর্তি কন্টেইনারগুলো রাখতে হবে। জাহাজগুলো পরিবহনের জন্য বিপুলসংখ্যক কন্টেইনার কীভাবে জেনারেট হবে, এসব নিয়ে এখনই পরিকল্পনা করতে হবে। অন্যথায় বন্দরের সুফল পাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে।’ 

মাতারবাড়ী বন্দরকে সিঙ্গাপুর অথবা শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে তৈরি করা সম্ভব। এমন মত দিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বাব অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম।

তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ী বন্দরে ১৬ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেকাংশে বাড়বে। তাই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে আশেপাশের দেশগুলোর পণ্য হ্যান্ডেলিং করা যেতে পারে। সিঙ্গাপুরের মতো মাতারবাড়ী বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে ব্যবহার করলে জাতীয় আয় অনেক বাড়বে। সেই চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।’ 

মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন মূল উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন। এখানেই নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। বিদ্যুৎকেন্দ্রের যত যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম বড় বড় জাহাজযোগে এসেছে, তার সবই মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল দিয়ে এসেছে। 

সম্প্রতি মাতারবাড়ী পরিদর্শনকালে এই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ জানিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় দল। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘শিডিউল অনুযায়ী আশা করছি, ২০২৬ সালের মধ্যে বন্দরের টার্মিনালে প্রথম জাহাজ আনতে পারব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা